সমন্বয়হীনতায় জলাবদ্ধ কক্সবাজার
জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও সড়ক বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতা নিরসন হচ্ছে না। এ তিন বিভাগ সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব বলে মনে করছেন শহরবাসী।
মঙ্গলবার শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে কক্সবাজার পৌরসভা কার্যালয় ঘেরাও করেন দুর্ভোগে পড়া পৌর এলাকার ১০ ও ১১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
এসময় বক্তারা বলেন, হরতাল-অবরোধ না থাকলেও কক্সবাজারে পর্যটকদের এখন বাঁধা জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর বিভিন্ন এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি জমে রাস্তা-ঘাট এবং বাসাবাড়ি ডুবে যায়। পানি ঢুকে পড়ে আবাসিক হোটেলগুলোতেও। এসময় শহরে যান চলাচল অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পৌর বাসিন্দাদের জীবন-যাত্রা অনেকটা স্তব্ধ হয়ে যায়। হোটেলেই বন্দী হয়ে পড়েন পর্যটকরা। অথচ পর্যটন এলাকা কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনে গত তিন বছরে কক্সবাজার পৌরসভা ব্যয় করেছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা।
এসময় বক্তব্য রাখেন, ১১ নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, জাসদ পৌর কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন মাসু, কক্সবাজার টমটম মালিক-চালক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা নাজিম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক এইচ এম নজরুল এবং শহর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোহেল প্রমুখ।
শহরবাসী মনে করেন, দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, অবৈধ দখলদার, অপরিকল্পিত পাহাড় কাটা এবং জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও সড়ক বিভাগের মধ্যে সমন্বয় না থাকাই পর্যটন শহর কক্সবাজারে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।
কক্সবাজার পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনে গত তিন বছরে কক্সবাজার পৌরসভা ব্যয় করেছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। তারমধ্যে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১০ লাখ ২৬ হাজার টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১০ লাখ ১৪ হাজার টাকা ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৭ লাখ টাকা এবং অন্যান্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল জাগো নিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও সড়ক বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজের পাশাপাশি এখাতে সরকারিভাবে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পেলে আগামী দু’বছরের মধ্যে কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব। তবে সেই সঙ্গে শহরে পাহাড় কাটাও বন্ধ করতে হবে।
জানা যায়, কক্সবাজার এমন একটি শহর যেখানে পাহাড়, সাগর, নদী, সমতল সবই আছে। গত প্রায় তিন দশক যাবৎ কক্সবাজার শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ক্রমাবনোতিশীল। পর্যটন এলাকা কক্সবাজার শহর সমগ্র বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বিনোদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নানাবিধ অবহেলার কারণে বাংলাদেশের উন্নয়নে কক্সবাজার পুর্ণাঙ্গ ভূমিকা রাখতে পারছে না। বাংলাদেশের অন্য যে কোনো এলাকার উন্নয়ন শুধু ওই এলাকার উন্নয়ন, আর কক্সবাজারের উন্নয়ন সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়ন। এ কক্সবাজার আজ জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত, কোনো কোনো সময় স্থবির।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী নগরীর দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং অবৈধভাবে খাল ও নালা দখল। তাই প্রথমেই প্রভাবশালী মহল কর্তৃক গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। পাশাপাশি লোক দেখানো কোনো অভিযান না করে পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির নেতা আবুল কাশেম সিকদার জাগো নিউজকে বলেন, কক্সবাজার শহরের প্রায় ব্যবসা-বাণিজ্য মুলত পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল। আর সেই পর্যটক যদি শুধু জলাবদ্ধতার কারণে কক্সবাজার না আসে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কি হতে পারে? তাই বিষয়টি নিয়ে এখনই সবাইকে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। না হয় ভবিষ্যতে হরতাল-অবরোধ লাগবে না, কক্সবাজারে পর্যটক আসা বন্ধ করতে জলাবদ্ধতাই যথেষ্ঠ।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, কক্সবাজার শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে জলাবদ্ধতার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। সেই মতে কাজ করা হবে।
এমজেড