শ্রীলঙ্কা হামলায় আইএসের বুনো উল্লাস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:০৩ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০১৯
শ্রীলঙ্কায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২৯০ জনের প্রাণহানি ও চার শতাধিক মানুষের আহতের ঘটনায় উল্লাস প্রকাশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার প্রশংসা করে আইএস সমর্থকরা এই উল্লাস প্রকাশ করেছে। তারা দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার বিলাসবহুল হোটেল ও গীর্জায় হামলাকে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলার প্রতিশোধ হিসেবে দেখছে।
অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী মার্কিন সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রুপ বলছে, ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে গোলাগুলির প্রতিশোধে শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার প্রশংসা করেছে আইএসের সমর্থকরা। এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী আনুষ্ঠানিকভাবে কলম্বোর পাঁচ তারকা হোটেল এবং গীর্জায় হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে শ্রীলঙ্কার পুলিশ বলছে, অজ্ঞাত একটি চরমপন্থী মুসলিম গোষ্ঠী হামলা চালাতে পারে; এমন আশঙ্কার তথ্য দেশটির গোয়েন্দারা ১০দিন আগেই পেয়েছিল।
লঙ্কান গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান বলছেন, প্রাথমিক আলামতে দেশটির ইসলামপন্থী গোষ্ঠী ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত (এনটিজে) হামলার পেছনে জড়িত থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। দেশটিতে আরো হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রুপের পরিচালক রিটা কাটজ বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইএসের সমর্থকরা শ্রীলঙ্কায় হামলার প্রশংসা করে হতাহতের ঘটনায় উল্লাস প্রকাশ করেছে। আইএস পরিচালিত চ্যানেলে শ্রীলঙ্কায় বিস্ফোরণের বুনো উল্লাস করা হয়েছে। এতে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের যেন আল্লাহ কবুল করে নেন সেই প্রার্থনাও করা হয়েছে।
তার দাবি, অনলাইনে এই প্রশংসার দ্বারা বোঝা যাচ্ছে সম্ভবত জঙ্গিগোষ্ঠীটি হামলার দায় নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ধরনের দাবি নিউজিল্যান্ডে হামলার প্রতিশোধ হিসেবেও করা হতে পারে। আর এটা অনেক পরিকল্পিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে ৫০ জন মুসল্লিকে হত্যা করে। হামলাকারী অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত শেতাঙ্গ সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। তার বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডের আদালতে হত্যা মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
রিটা কাটজ বলেছেন, আইএসের বিভিন্ন পদে শ্রীলঙ্কার যোদ্ধাদের নাম উল্লেখ রয়েছে। যে কারণে দেশটিতে আইএসের সমর্থকরা অবাধ প্রবেশ করতে পারে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, শ্রীলঙ্কার উচ্চশিক্ষিত এবং এলিট মুসলিম পরিবারের বেশ কিছু সদস্য সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে যোগ দিয়েছে।
সিরিয়ায় ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস প্রতিশোধ হিসেবে ‘প্রতিশোধের আক্রমণ’ নামে বৈশ্বিক একটি সামরিক উদ্যোগ চালু করার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর এই হামলা হলো। শ্রীলঙ্কায় হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহে ইতোমধ্যে ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের ধর্মীয় চরমপন্থী হিসেবে পুলিশি জিম্মায় রাখা হয়েছে।
ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, শ্রীলঙ্কার পুলিশের প্রধান পুজুথ জয়াসুনদর হামলার ১০দিন আগেই দেশটির শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও সেই চিঠি পাঠানো হয়েছিল; কিন্তু সেটি তার নজরেই আনা হয়নি। চিঠিতে দেশটির প্রধান ও প্রসিদ্ধ গীর্জাগুলোতে ইসলামপন্থী আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা হামলা চালাতে পারেন বলে সতর্ক করে দেন তিনি।
শ্রীলঙ্কা পুলিশ প্রধানের সম্ভাব্য হামলার সতর্ক বার্তা দিয়ে পাঠানো ওই চিঠি এএফপির হাতে এসেছে। চিঠিতে বলা হয়, একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পেরেছে যে, ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত (এনটিজে) দেশের প্রসিদ্ধ গীর্জা ও কলম্বোয় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।
শ্রীলঙ্কার একটি ছোট চরমপন্থী মৌলবাদী ইসলামি দল হলো এনটিজে। দেশটিতে এ ধরনের হামলার চালানোর কোনো রেকর্ড এই দলের নেই। কিন্তু গত বছর দেশটির বেশ কিছু বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুরের সঙ্গে দলটির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।
লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে সম্ভাব্য হামলার সতর্ক বার্তা সম্বলিত গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, হামলা হওয়ার আগে সরাসরি তার নজরে আনা হয়নি এই চিঠি।
এসআইএস/পিআর