দুইশো বছরে তৈরি, আগুনে পুড়ে ছারখার কয়েক ঘণ্টায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৪৮ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

ফ্রান্সের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনার একটি রাজধানী প্যারিসে মধ্যযুগীয় নটর ডেম ক্যাথেড্রাল। সোমবারের এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তার অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে ৮৫০ বছরের প্রাচীন এই গির্জাটি কয়েক ঘণ্টার আগুনে ক্ষতবিক্ষত হলেও এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল দুইশ বছর।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গির্জাটি দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতক ধরে নির্মাণ করা হয়। তবে অগ্নিকাণ্ডের পর মূল কাঠামো এবং দুটো বেল টাওয়ার রক্ষা করা গেছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

প্রাচীন গোথিক ভবনটিকে রক্ষার জন্য দমকল কর্মীরা ব্যাপক চেষ্টা চালালেও এর উঁচু মিনার এবং ছাদ ধ্বসে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো কেউই নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি।

তবে কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান সংস্কার কাজের সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে। ক্ষয়িষ্ণু ভবনটি রক্ষার জন্য গত বছর ফ্রান্সের ক্যাথলিক চার্চ তহবিলের আহ্বান করেছিল।

স্থানীয় সময় সাড়ে ছয়টার দিকে গির্জাটিতে আগুন লাগার পর দ্রুত তা ছাদে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনের ছাদে যখন আগুন জ্বলতে থাকে এবং জানালা ধ্বংস হতে থাকে তখন প্রকট শব্দ শোনা যায়।

উচু মিনার খসে পড়ার আগে তা কাঠের তৈরি কাঠামো ধংস করে। একটি বেল টাওয়ার ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য পাঁচ শতাধিক অগ্নিনির্বাপণ কর্মী কাজ করে।

চার ঘণ্টা পরে অগ্নিনির্বাপণ বাহিনীর প্রধান জ্যঁ ক্লদে গ্যালেট বলেন, প্রধান কাঠামোটি পুরোপুরি ধ্বংসের কবল থেকে ‘রক্ষা করা গেছে এবং সংরক্ষিত’ আছে।

গির্জাটির শিল্পকর্ম সংরক্ষণ এবং এর উত্তরাংশে টাওয়ার রক্ষার জন্য রাতভর সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়। আশেপাশের রাস্তায় হাজারো মানুষ জড়ো হন আগুনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করবার জন্য।

অনেককে প্রকাশ্যে কাঁদতে দেখা যায়। কেউ দুঃখ প্রকাশ করছিলেন, কেউবা প্রার্থনা করছিলেন গির্জাটি যেন বেঁচে যায়। সেই সময় রাজধানীর অনেক গির্জায় বেল বাজাতে শোনা যায়।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সকল ক্যাথলিক এবং ফরাসি নাগরিকের জন্য তার সমবেদনার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই অংশটি পুড়তে দেখে আমার দেশের আর সবার মত আমিও আজকের রাতে অত্যন্ত ব্যথিত।’

ম্যাক্রো বলেন, ‘আমরা একত্রে পুনরায় তৈরি করবো নটর ডেম।’ তিনি ফায়ার ফাইটারদের চুড়ান্ত সাহসিকতা এবং পেশাদারিত্বের প্রশংসা করেন।

ম্যাক্রোর একটি গুরুত্বপূর্ণ টেলিভিশন বক্তৃতা দেয়ার কথা থাকলেও অগ্নিকাণ্ডের কারণে তা বাতিল করেছেন বলে এলিজি প্রাসাদ কর্মকর্তারা জানান।

ইতিহাসবিদ কামিলি পাস্কাল ফরাসি গণমাধ্যম বিএফএমটিভিকে বলেন, আগুন ধ্বংস করে দিচ্ছে ‘অমূল্য ঐতিহ্য।’ ৮০০বছর ধরে এই ক্যাথেড্রাল প্যারিসে দাঁড়িয়ে ছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে খুশির এবং দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় নটরডামের ঘণ্টাধ্বনি তাকে স্মরনীয় করে রেখেছে।

প্যারিসের মেয়র অ্যানি হিদালগো সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা যে সীমানা বেষ্টনী তৈরি করে দিয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে তারা যেন তা মান্য করে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভেতরে প্রচুর সংখ্যক শিল্পকর্ম রয়েছে...এটা একটা সত্যিকারের ট্রাজেডি।’

southeast

বিবিসি ওয়ার্ল্ড অনলাইনের হেনরি আস্টয়ের-এর বিশ্লেষণ অনুসারে, নটর ডেমের মত অন্য কোন নিদর্শন বা স্থান ফ্রান্সের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনা। জাতীয় প্রতীক হিসেবে এর কাছাকাছি প্রতিদ্বন্দ্বী আইফেল টাওয়ার।

দ্বাদশ শতাব্দী থেকে প্যারিসে দাড়িয়ে ছিল নটর ডেম। ভিক্টর হুগোর ‘দ্য হাঞ্চব্যাক অব নটর ডেম’ ফরাসিদের কাছে নটর ডেম দি প্যারিস হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছিল। এই ক্যাথেড্রালটি সর্বশেষ বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছিল ফরাসি বিপ্লবের সময়।

নটর ডেম সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য

> প্রতিবছর নটরডাম ক্যাথেড্রাল দেখতে আসেন এক কোটি ৩০ লাখ দর্শনার্থী।

> এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটিজে সাইট যা ১২ এবং ১৩ শতক জুড়ে নির্মিত হয়েছিল এবং বর্তমানে এর বড় ধরনের সংস্কারকাজ চলছিল

> সংস্কার কাজের জন্য ঢোকার মুখের বেশ কয়েকটি প্রতিমা সরানো হয়েছিলো।

>ভবনের ছাদের বেশিরভাগই ছিল কাঠ দিয়ে তৈরি, যা আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে

দুই বিশ্বযুদ্ধের ধকল থেকে এটি টিকে গিয়েছিল। একটি জাতির অটলতার প্রতিমূর্তির এভাবে পুড়তে এবং মিনার চোখের সামনে গুড়িয়ে যেতে দেখা যেকোনো ফরাসি নাগরিকের জন্য বিরাট এক ধাক্কা।

প্রত্যক্ষদর্শী সামান্থা সিলভা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব দেশের বাইরে থাকে এবং যখনই তারা আসে প্রতিবার আমি তাদের বলি নটর ডেম বেরিয়ে এসো। অনেকবার আমি এখানে এসেছি কিন্তু কখনোই এক রকম মনে হয়নি। এটা প্যারিসের সত্যিকারের প্রতীক।’

সূত্র : বিবিসি (বাংলা)

এসএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।