আগুন থেকে রক্ষা পেয়েছে নটরডেম ক্যাথেড্রালের মূল কাঠামো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:২৫ এএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

ফ্রান্সের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনার একটি প্যারিসে অবস্থিত ৮৫০ বছরের পুরনো নটরডেম ক্যাথেড্রাল। সোমবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুরনো এই গির্জাটির অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। ৮৫০ বছরের প্রাচীন এই ভবনটি পুরোপুরি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় দুশো বছর। গির্জাটি দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতক ধরে নির্মাণ করা হয়।

তবে অগ্নিকাণ্ডের পর মূল কাঠামো এবং দু'টো বেল টাওয়ার রক্ষা করা গেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। প্রাচীন গোথিক ভবনটিকে রক্ষার জন্য দমকল কর্মীরা ব্যাপক চেষ্টা চালালেও এর উঁচু মিনার এবং ছাদ ধ্বসে পড়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো পরিষ্কার নয়। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, এর সঙ্গে চলমান সংস্কার কাজের কোনও যোগসূত্র থাকতে পারে। ক্ষয়িষ্ণু ভবনটি রক্ষার জন্য গত বছর ফ্রান্সের ক্যাথলিক চার্চ তহবিলের আহ্বান জানিয়েছে।

স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আগুন লাগে এবং দ্রুত তা ছাদে ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাথিড্রালের ছাদে যখন আগুন জ্বলতে থাকে এবং ভবনের জানালা আগুনে পুড়ে যাওয়ার সময় প্রকাণ্ড শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

paris

উঁচু মিনার খসে পড়ার আগে তা কাঠের তৈরি কাঠামো ধংস করে। একটি বেল টাওয়ার ধসের হাত থেকে রক্ষার জন্য ৫শ দমকল কর্মী কাজ করেছেন।

আগুন লাগার চার ঘণ্টা পর দমকল বাহিনীর প্রধান জ্যঁ-ক্লদে গ্যালেট বলেন, প্রধান কাঠামোটি পুরোপুরি ধ্বংসের কবল থেকে ‘রক্ষা করা গেছে এবং এটি সংরক্ষিত’ আছে।

ক্যাথেড্রালের শিল্পকর্ম সংরক্ষণ এবং এর উত্তরাংশে টাওয়ার রক্ষার জন্য রাতভর সর্বাত্মক চেষ্টা চালান দমকল কর্মীরা। আগুনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে ক্যাথেড্রালের আশেপাশের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন।

অনেককে প্রকাশ্যে কাঁদতে দেখা যায়, একই সময়ে অন্যরা দুঃখ করছিলেন, কেউবা প্রার্থনা করছিলেন। এ সময় রাজধানীর অনেক গির্জায় বেল বাজাতে শোনা যায়।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সকল ক্যাথলিক এবং ফরাসি নাগরিকের জন্য তার সমবেদনার কথা জানান। তিনি বলেন, আমাদের এই অংশটি পুড়তে দেখে আমার দেশের আর সবার মত আমিও আজকের রাতে অত্যন্ত ব্যথিত।

ম্যাক্রো বলেন, আমরা একত্রে পুনরায় তৈরি করবো নটরডেম। তিনি দমকল কর্মীদের চুড়ান্ত সাহসিকতা এবং পেশাদারিত্বের প্রশংসা করেন।

ম্যাক্রো এর আগে টেলিভিশনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দেয়ার কথা থাকলেও অগ্নিকাণ্ডের কারণে তা বাতিল করেছেন বলে জানানো হয়।

paris

ইতিহাসবিদ কামিলি পাস্কাল ফরাসি গণমাধ্যম বিএফএমটিভিকে বলেন, আগুন ধ্বংস করে দিচ্ছে অমূল্য ঐতিহ্য। ৮০০ বছর ধরে এই ক্যাথেড্রাল প্যারিসে দাঁড়িয়ে ছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে খুশির এবং দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় নটরডেমের ঘণ্টাধ্বনি তাকে স্মরনীয় করে রেখেছে।

প্যারিসের মেয়র অ্যানি হিদালগো আহ্বান জানিয়েছেন যে, সাধারণ মানুষদের জন্য অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা যে সীমানা বেষ্টনী তৈরি করে দিয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে তারা যেন তা মান্য করে।

তিনি বলেন, ভেতরে প্রচুর সংখ্যক শিল্পকর্ম রয়েছে। এটা একটা সত্যিকারের ট্রাজেডি। বিবিসি ওয়ার্ল্ড অনলাইনের হেনরি আস্টয়ের-এর বিশ্লেষণ অনুসারে, নটরডেমের মত অন্য কোন নিদর্শন বা জায়গা ফ্রান্সের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনা। জাতীয় প্রতীক হিসেবে এর কাছাকাছি প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে আইফেল টাওয়ার।

১২০০ শতক থেকে প্যারিসে দাঁড়িয়ে আছে নটরডেম। ভিক্টর হুগোর ‘দ্য হাঞ্চব্যাক অব নটরডেম’ ফরাসিদের কাছে নটরডেম ডি প্যারিস হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছিল। এই ক্যাথেড্রালটি সর্বশেষ বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছিল ফরাসি বিপ্লবের সময় ।

প্রতিবছর নটরডাম ক্যাথেড্রাল দেখতে আসেন প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ দর্শনার্থী। এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট যা ১২ এবং ১৩ শতক জুড়ে নির্মিত হয়েছিল এবং বর্তমানে এর বড় ধরনের সংস্কারকাজ চলছিল।

সংস্কার কাজের জন্য ঢোকার মুখের বেশ কয়েকটি প্রতিমা সরানো হয়েছিল। ভবনের ছাদের বেশিরভাগই ছিল কাঠ দিয়ে তৈরি, যা আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

দুই বিশ্বযুদ্ধের ধকল থেকে এটি টিকে গেছে। একটি জাতির অটলতার প্রতিমূর্তি এভাবে পুড়ে যাওয়া এবং মিনার চোখের সামনে গুড়িয়ে যেতে দেখা যেকোনো ফরাসি নাগরিকের জন্য বিরাট এক ধাক্কা।

paris

প্রত্যক্ষদর্শী সামান্থা সিলভা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব দেশের বাইরে থাকে এবং যখনই তারা আসে প্রতিবার আমি তাদের বলি নটরডেম বেরিয়ে এসো। অনেকবার আমি সেখানে গেছি, কিন্তু কখনোই একরকম মনে হয়নি। এটা প্যারিসের সত্যিকারের প্রতীক।

প্রাচীন এই স্থাপনায় আগুনের ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরামর্শ দিয়েছেন যে, ‘সম্ভবত উড়ন্ত জল-কামান’ এই আগুন নেভাতে কার্যকর হতে পারে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল ফ্রান্সের জনগণের প্রতি তার সমর্থনের কথা জানিয়েছেন এবং নটরডেমকে ‘ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় সংস্কৃতির প্রতীক’ বলে অভিহিত করেছেন।

ব্রিট্রিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এক টুইটে লিখেছেন, ফ্রান্সের জনগণের পাশে থেকে জরুরি পরিষেবাগুলোর সাথে যারা নটরডেম ক্যাথেড্রালে ভয়ানক অগ্নিকাণ্ডের বিরুদ্ধে লড়াই করছে আজ রাতে তাদের প্রতি আমার সমবেদনা।

ভ্যাটিক্যান থেকে বলা হচ্ছে, এই অগ্নিকাণ্ডের খবর তাদের শোকাহত এবং ব্যথিত করেছে এবং তারা ফরাসি ফায়ার সার্ভিসের জন্য প্রার্থনা করছে। একটি জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র নটরডেম ক্যাথেড্রালের পাথরে ফাটল দেখা দেয়ার পর ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্যারিসের প্রসিকিউটর অফিস তদন্ত শুরু করেছে।

টিটিএন/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।