ভারতে মুসলিম লীগের পতাকা নিয়ে বিতর্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৩৭ পিএম, ০৭ এপ্রিল ২০১৯

দক্ষিণ ভারতের কেরালায় একটি স্বীকৃত রাজনৈতিক দল হল ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ (আইইউএমএল)। সত্তর বছরেরও বেশি পুরনো এই রাজনৈতিক দলটি ভারতের পার্লামেন্টে প্রায় সব সময় একাধিক এমপি ছিল। কিন্তু সম্প্রতি দলটির পতাকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগের পতাকার রং সবুজ। যার এক কোণায় সাদাতে চাঁদ-তারা আঁকা থাকে। কেরালার মুসলিম লীগের এই পতাকা নিয়ে আচমকাই ভারতে বিরাট তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।

সম্প্রতি কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী যখন কেরালার ওয়েনাড আসন থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে যান, তখন তার মিছিলে স্বাভাবিকভাবেই ছিল মুসলিম লীগের পতাকার ছড়াছড়ি। কেননা অনেক বছর ধরে কেরালাতে আইইউএমএল হল কংগ্রেসের জোটসঙ্গী। জোটের অংশ হিসেবে তারা বহু বছর রাজ্যের ক্ষমতাতেও থেকেছে।

কিন্তু কংগ্রেস সভাপতির রাজনৈতিক শোভাযাত্রায় কেন চাঁদ-তারা খচিত সবুজ পতাকা থাকবে, এই প্রশ্ন তুলে ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপি সমর্থকরা। এই প্রশ্নও তোলা হচ্ছে যে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার সঙ্গে এর সাদৃশ্য আছে।

ভারতের কোনও রাজনৈতিক দল আদৌ এমন একটি পতাকা কেন ব্যবহার করবে সে প্রশ্নও উঠেছে। বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রকাশ্য জনসভায় এই পতাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘রাহুল গান্ধীর মিছিলে ভারতের তেরঙা পতাকা নেই, কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক হাত নেই শুধু আছে মুসলিম লীগের চাঁদ-তারা খচিত সবুজ পতাকা এটা কেমন কথা? মুসলিম লীগকে ‘ভাইরাসে’র সঙ্গে তুলনা করে আদিত্যনাথ আরও মন্তব্য করেছেন, ‘মনে রাখবেন, এই দলটিই কিন্তু ভারতে দেশভাগের জন্য দায়ী ছিল।"

মুসলিম লীগের ওই পতাকা নিয়ে রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করতে গিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন বলিউড অভিনেত্রী কোয়েনা মিত্র। মুসলিম লীগের পতাকা-শোভিত একটি ছবি পোস্ট করে তিনি টুইট করেছেন, ‘প্রথম দেশভাগটা করেছিলেন সন্ত্রাসবাদী জিন্নাহ; পরেরটা কী রাহুল গান্ধী করবেন?’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘ইসলামিক পতাকা দিয়ে রাহুল গান্ধীকে কেরালাতে স্বাগত জানানো হয়েছে। তাদের দলের ইশতেহারও জিহাদকে সমর্থন করে।’ অবশ্য এই টুইটের প্রতিক্রিয়াও হয়েছে তীব্র।

কেরালার দক্ষিণপন্থী অ্যাক্টিভিস্ট রাহুল ঈশ্বর কোয়েনা মিত্রকে শুধরে দিয়ে লিখেছেন, ‘আপনি যে পতাকার কথা বলছেন, সেটা কিন্তু আসলে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগের। দেশভাগের সময় তারা কিন্তু ভারতকেই বেছে নিয়েছিলেন।

রাহুল ঈশ্বর আরও লিখেছেন, ‘এই দলটি হল আমাদের সেই মুসলিম ভাইদের, যারা জিন্নাহ’র পাকিস্তানে না গিয়ে গান্ধীর ভারতে থেকে গিয়েছিলেন।’ আইইউএমএল দলের পক্ষ থেকেও দাবি করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে অযথা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

কেরালায় মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক কেপিএ মাজিদ বলেছেন, ‘ওয়েনাডে রাহুল গান্ধীর মিছিলে কোনও পাকিস্তানের পতাকাও ছিল না, ইসলামী পতাকাও ছিল না। যা ছিল, সেগুলো শুধু আমাদের দলেরই পতাকা ‘

তিনি আরও দাবি করেছেন, ‘আর এই পতাকা আমাদের সঙ্গে আছে দলের জন্মলগ্ন থেকেই! কাজেই ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের এই পতাকা নিয়ে যে সব কথাবার্তা বলা হচ্ছে তা পুরোটাই ভিত্তিহীন।’

তারা আরও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার সঙ্গে আইইউএমএলের পতাকার অনেক ফারাকও আছে। পাকিস্তানের পতাকার একপাশে যেমন চওড়া সাদা ফালি আছে, কেরালার দলটির পতাকায় কিন্তু তা নেই।

ইতিহাসও বলছে, কেরালার এই রাজনৈতিক দলটির সঙ্গে ভারতের দেশভাগের সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই কেননা আইইউএমএলের প্রতিষ্ঠাই হয়েছে ভারতের স্বাধীনতার পর ১৯৪৮ সালে।

অবিভক্ত ভারতে পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য মহম্মদ আলি জিন্নাহ-র নেতৃত্বে আন্দোলন চালিয়েছিল যে অল ইন্ডিয়া মুসলীম লীগ, সেই দলটি কিন্তু দেশভাগের পর পরই ভেঙে দেয়া হয়। পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানে সেই দলটির আলাদা আলাদা শাখা তৈরি হয়।

ভারতে মোহাম্মদ ইসমাইলের নেতৃত্বে তখনকার মাদ্রাজে ১৯৪৮ সালের ১০ মার্চ জন্ম হয় ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগের। ভারতের প্রায় প্রতিটি নির্বাচিত লোকসভাতেই (দ্বিতীয়টি বাদে) আইইউএমএলের এক বা একাধিক এমপি ছিলেন।

এখনকার কেরালা বিধানসভাতেও তাদের আঠারো জন নির্বাচিত এমএলএ আছেন। ১৯৭৮ সালে কেরালাতে মুখ্যমন্ত্রী সি এইচ মহম্মদ কোয়া-র নেতৃত্বে আইইউএমএল জোট সরকারও গঠন করেছিল।

দক্ষিণ ভারতের আর একটি রাজ্য তামিল নাডুর বিধানসভাতেও আইইউএমএল সদস্যরা একাধিকবার জিতেছেন। কিন্তু ভারতের নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এই পুরনো রাজনৈতিক দলটির পতাকাকে ঘিরেই এখন বিতর্ক উসকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

এসএ/জেআইএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।