ভূমধ্যসাগরে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান


প্রকাশিত: ০৮:০৩ এএম, ৩০ আগস্ট ২০১৫

সভ্যতার ইতিহাস অভিবাসনের ইতিহাস। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ দেশান্তরী হয়। এই চলমানতাই সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। কলম্বাস যদি ঘরে বসে থাকতেন তাহলে আমেরিকা আবিষ্কার হতো না। অথচ এখন আধুনিক  রাষ্ট্রব্যবস্থা অভিবাসীদের ব্যাপারে কঠোর। পাসপোর্ট ভিসার বাইরে রাষ্ট্র কোনো চিন্তা করতে পারে না। এখানে সভ্যতা, মানবিকতার কোনো জায়গা নেই। এমনকি চরম বিপজ্জনক অবস্থায়ও অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষ যদি ছোট্ট নৌকায় গাদাগাদি করে সমুদ্রে ভাসতে থাকে তাতেও বিবেক জেগে ওঠে না।  শিক্ষা, সভ্যতা, অর্থনৈতিক দিক থেকে চরম উৎকর্ষ অর্জন করেছে এমনদেশও তাদের আশ্রয় দিতে চায় না। সন্তান কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে সীমান্তে প্রবেশ করলেও পিতা-মাতাকে বন্ধুকের নলের মুখে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। একবিংশ শতাব্দীর এই সময়েও মানবিকতার চরম বিপর্যয় আমাদের উদ্বেগাকুল না করে পারে না।

লিবীয় উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকায় করে  ইউরোপে ঢুকতে যেয়ে সাগরে ডুবে দুই শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ২৪ জন বাংলাদেশি। প্রায় ৫শ যাত্রী নিয়ে দুটি নৌকা ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে নৌকা ডুবে দুই শতাধিক যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের উদ্ধার করা হলেও তারা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।  উদ্ধার করা যাত্রীদের মধ্যে ৫২ জন হচ্ছে বাংলাদেশি। ।এছাড়া লিবীয় উপকূলে প্রায় ২৪ জন বাংলাদেশি অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই মধ্য ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ায় একটি ছোট লরি থেকে বাংলাদেশিসহ ২৬ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে আরেকটি লরি থেকে ৭০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের ৮ মাসে এ ধরনের নৌকাডুবিতে মারা গেছে আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অস্থিতিশীল অবস্থা বিশেষ করে যুদ্ধোত্তর লিবিয়ায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে অনেকের জন্যই খেয়েপড়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ জন্য জীবনের অমোঘ টানে বাধ্য হয়ে তারা লিবিয়া ছেড়ে  উন্নত জীবনের আশায় সাগর পাড়ি দিতে চেয়েছিল। উপায়ান্তরহীন মানুষের এটি আসলে ছিল মৃত্যুর পথেই যাত্রা। এই মানবিক বিপর্যয় কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এটা শুধু বাংলাদেশি কিংবা আরও দু`একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার  কারণে অনেক মানুষ বলতে গেলে উদ্ধাস্তু হয়েছে। যারা বিভিন্ন দেশ থেকে এসব দেশে কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন তাদের অবস্থা আরও করুণ। এসব অসহায় মানুষের ব্যাপারে কারও কোনও ভাবনা নেই।

মনে রাখা প্রয়োজন ইউরোপের উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ব্যাপারে কড়াকড়ির কারণেই ঝুঁকিপূর্ণ পথে পা বাড়ায় হাজারো মানুষ। কাজেই এই মৃত্যুর দায় তাদেরও নিতে হবে। আর মধ্যপ্রচ্যের সমস্যা কোনো বিশেষ দেশ বা নির্দিষ্ট অঞ্চল ও গোষ্ঠীর সমস্যা নয়। এ জন্য বিশ্বসস্প্রদায়কেও এগিয়ে আসতে হবে।  জাতিসংঘের কার্যক্রম কেবল বাণী-বিবৃতি বা দুঃখ প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না।

বাংলাদেশ সরকারকেও তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার জঙ্গলে গণকবর আবিষ্কার হওয়ার পর এখন দূর মধ্যপ্রাচ্যেও অকাতরে জীবন দিচ্ছে অভিবাসন প্রত্যাশীরা। কেবল উচ্চ রেমিটেন্স প্রাপ্তিতে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুললে চলবে না। নাগরিকরা বিদেশ বিভূঁইয়ে যাতে কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়ে সেটি দেখতে হবে। লিবীয় উপকূলে মানবিক বিপর্যয় রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মৃতদেহগুলোও স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের যে কোনো সমস্যায় সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। দেশের মানুষের বেঘোরো প্রাণ যাবে আর কর্তৃপক্ষ চেয়ে চেয়ে দেখবে এটা হতে পারে না। এ ধরনের মৃত্যুর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে বিদেশে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রের অনুসন্ধান এবং সঠিকভাবে সেখানে যাতে বাংলাদেশিদের পাঠানো যায় সে ব্যাপারে কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। এ ধরনের করুণ মৃত্যুর পুনরাবৃত্তি রোধ এবং দেশের রেমিটেন্স প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।