পশ্চিমা দেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যত হামলা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০৭ এএম, ১৭ মার্চ ২০১৯
নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর খ্রীষ্টান জঙ্গির বন্দুক হামলায় ৫০ জন নিহত হওয়ার ঘটনাটি পশ্চিমা দেশগুলোতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলার সর্বশেষ উদাহরণ। গবেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশে মুসলিম বিদ্বেষী হামলার ঘটনা ঘটেছে যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা পশ্চিমা দেশগুলোতে মুসলিমদের ওপর কিংবা মুসলিম বিদ্বেষী কয়েকটি হামলার ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেসব হামলার কয়েকেটি সম্পর্কে সংক্ষেপে জানানো হয়েছে তাদের প্রতিবেদনে।
যুক্তরাষ্ট্র, আগস্ট ২০১৬
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যস্ততম শহর নিউইয়র্কে একজন ইমাম ও তার সহযোগিকে মসজিদের পাশে কুইন্স নামের স্থানে রাস্তায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ বলেছিল ঘৃণা থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। হামলাকারীকে আটক করে তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
সুইজারল্যান্ড, ডিসেম্বর ২০১৬
সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরের কেন্দ্রীয় একটি মসজিদে ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ভেতরে প্রবেশ করে বসে থাকা এক ব্যক্তিকে গুলি করা শুরু করে। যে কিনা সন্ধ্যার নামাজ শেষে চা পান করছিল। সেই হামলায় তিনজন আহত হয়।
তার আগের দিন ওই একই হামলাকারী আরেকজনকে হত্যা করে। অভিযুক্ত ওই হামলাকারী পালাতে সক্ষম হয়। কিন্তু মসজিদের পাশের একটি নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
কানাডা, জানুয়ারি ২০১৭
কানাডার কুইবেক শহরের একটি মসজিদে মাগরিবের নামাজ চলছিল। আলেকজান্ডার বিশোন্নেট্টে নামে ২৭ বছর বয়সী এক যুবক নামাজরত মুসল্লিদের ওপর গুলি করে ছয়জনকে হত্যা করে। বন্দুকধারীর অতর্কিতে হামলায় ১৯ জন আহত হয়েছিল।
সেই হামলায় যে ছয়জন নিহত হয়েছিল তাদের মধ্যে একজন বন্দুকধারীকে আটকাতে গিয়ে প্রাণ দেন। আলেকজান্ডার বিশোন্নেট্টে নামের সেই হামলাকারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, মে ২০১৭
ঘটনাটি ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ওরেগনে। ট্রেনে এক ব্যক্তি দুজন মুসলিম নারীর সঙ্গে বর্ণবাদী আচরণ করে। আর তার প্রতিবাদ করতে যায় অন্য দুই ব্যক্তি।
প্রতিবাদ করতে যাওয়া ওই দুই ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। হামলাকারী হলেন ৩৫ বছর বয়সী জেরেমি জোসেফ ক্রিশ্চিয়ান। তাছাড়া ওই হামলায় তৃতীয় একজন ব্যক্তি আহত হন।
যুক্তরাজ্য, জুন ২০১৭
লন্ডনের ৪৮ বছর বয়সী গাড়ি চালক একদল মুসলিম মুসল্লিদের ওপর চলন্ত গাড়ি উঠিয়ে দেন। ওই মুসল্লিরা ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদে থেকে বেরিয়ে হাঁটছিল। সেই গাড়ি হামলায় ৫১ বছর বয়সী একজন নিহত ও আরও নয়জন আহত হয়েছিলন।
গাড়িচালকের নাম হলো ড্যারেন ওসবর্ন। তিনি নাকি হামলার পর সময় চিৎকার করছিলেন, ‘আমি সব মুসলিমকে মারতে চাই। আমি যার খুব সামান্য করতে পারলাম।’ তাকে সন্ত্রাসী সংকান্ত আইনে ৪৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
স্পেন, আগস্ট ২০১৭
স্পেনে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অপরাধ সংগঠিত হয়। বার্সেলোনায় সন্ত্রাসী হামলায় ১৩ জন নিহত এবং ৫০ জন আহত হন। পথচারীদের ভিড়ের মধ্যে একটি ছোট গাড়ি (ভ্যান) তুলে দিয়ে এ হামলা চালানো হয়। বার্সেলোনায় হামলার কয়েক ঘণ্টা পর দেশটির উপকূলীয় শহর ক্যামব্রিলসে একই কায়দায় হামলা চালানো হয়।
স্পেনের নেভারে নামক অঞ্চলে মরোক্ক থেকে যাওয়া তিন মুসলিমকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। তাছাড়া মাদ্রিদে মেট্রো রেলের সামনে এক মুসলিম নারীর ওপর হামলা চালানো হয়।
নিউজিল্যান্ড, মার্চ ২০১৯
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে গত শুক্রবার দুটি মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর বর্বর বন্দুক হামলা করা হয়। নৃশংস এই হামলায় নিহত হয়েছে ৫০ জন। আহত আরও প্রায় অর্ধশতাধিক।
নৃশংস ও ভয়াবহ এই হামলা চালিয়েছে অস্ট্রেলিয় এক খ্রীষ্টান জঙ্গি। মুসলিমদের ওপর ঘৃণা থেকে সে এ হামলা চালিয়েছে। আর এর প্রমাণ তার প্রকাশিতে ইশতেহারে। সেখানে সে মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করার কথা জানিয়েছেন।
এসএ/এমএস