৫ মাসে দু’টি বিমান বিধ্বস্ত, সব দেশেই বন্ধ ৭৩৭ ম্যাক্স

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৪ পিএম, ১৪ মার্চ ২০১৯

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং। পাঁচ মাসের ব্যবধানে দু'টি দুর্ঘটনার পর ওই মডেলের বিমান চলাচলে নিরাপত্তার সংশয় থেকে ইতোমধ্যে অনেক দেশই এই বিমানের চলাচল বাতিল করেছে।

তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স-৮ বিমানের চলাচল বাতিল করলেও যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই বলে আসছিল যে, বোয়িংয়ের এই মডেল নিরাপদ নয়- এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনো আসেনি। কিন্তু এবার নিরাপত্তার হুমকি ছাড়াও এ বিষয়ে বিতর্ক এবং সর্বশেষ তদন্ত থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাপি এই মডেলের সব বিমানের ওঠানামা বন্ধ করেছে বোয়িং।

বিশ্বজুড়ে সর্বশেষ দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রও তাদের দেশে বোয়িংয়ের ওই মডেলের ওঠানামা বাতিল করেছে। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানটি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছিল সেখান থেকে তদন্তকারীরা নতুন কিছু প্রমাণ উদ্ঘাটন করার পর বুধবার এই মডেলের সব বিমানের ওঠানামা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত জানায় বোয়িং।

যুক্তরাষ্ট্রের এই বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে তারা তাদের ৩৭১টি বিমানের সবগুলোরই ওঠানামা বাতিল করেছে।

মার্কিন কেন্দ্রীয় বিমান চলাচল প্রশাসন (এফএএ) জানিয়েছে, সর্বশেষ প্রমাণের পাশাপাশি স্যাটেলাইটের তথ্য নতুন করে পরিমার্জনের পরই বিমানগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই যখন বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমান চলাচল বন্ধ রেখেছিল তখনও এই বিমান চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিল এফএএ। তবে তাদের নতুন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিমানের কর্মীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিবহন সেফটি বোর্ডের সঙ্গে এফএএর একটি দলও ইথিওপিয়ার দুর্ঘটনাস্থলে তদন্তের কাজ করছে।
বুধবার এফএএর ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক ড্যান এলওয়েল বলেন, এটা সবার কাছেই পরিস্কার যে, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের (ফ্লাইটের) গমনপথ লায়ন এয়ারের মতোই ছিল এবং দুটিই বিমানের দুর্ঘটনা একই রকম হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আমরা যেসব প্রমাণ পেয়েছি তাতে এ বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে। নতুন তথ্য এবং চাক্ষুষ প্রমাণের পর এফএএ-এর তরফ থেকে জরুরি নির্দেশনা আসছে বলে প্রাথমিকভাবে ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কয়েক মাসের ব্যবধানে একই মডেলের দু'টি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ায় বিশ্বজুড়ে এই বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। গত রোববার ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৫৭ জন প্রাণ হারায়। অপরদিকে গত বছর অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের যে বিমানটি সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছিল সেটিও ওই একই মডেলের এবং এতে ১৮৯ জন নিহত হয়।

রোববার বিমান দুর্ঘটনার পর পরই ৫ টি ম্যাক্স বিমান চলাচল বাতিল করে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স। চীনের এয়ার চায়না, চায়না ইস্টার্ন ও চায়না ওয়েস্টার্নসহ বিশ্বের বহু বিমান সংস্থাও ইতোমধ্যে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স চলাচল বাতিল করেছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই ভারতও তাদের এই মডেলের সব বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

বুধবার বিকাল থেকে ওই একই মডেলের বিমান চলাচল বাতিল করেছে দিল্লি। ভারতের বিমান পরিবহণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যতদিন না নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা হচ্ছে, ততদিন বোয়িং ম্যাক্স ৭৩৭-এর বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হবে।

জার্মানি ও ফ্রান্সসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ জানিয়েছে, তাদের আকাশসীমা দিয়েও কোনও ম্যাক্স ৭৩৭ বিমান চলাচল করবে পারবে না। সিঙ্গাপুর, চীন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার পর ব্রিটেনও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান ওঠা-নামা নিষিদ্ধ করেছে। একাধিক দেশ বোয়িংয়ের ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান চলাচল বাতিল করে দিয়েছে। চীন জানিয়েছে, নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ছাড়পত্র না পেলে তারাও এই মডেলের বিমান ওড়াবে না।

ব্রিটেনের বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ (সিএএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আপাতত ব্রিটেনের আকাশ সীমায় বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স নিষিদ্ধ থাকবে।

এদিকে, রোববারের ওই দুর্ঘটনার আগেই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের কাছে ওই মডেলের বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বেশ কয়েকজন পাইলট। তাদের মধ্যে একজন পাইলট ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স-৮ বিমান বিধ্বস্তে নিহত হয়েছেন। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই তিনি ওই বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

মার্কিন দৈনিক ডালাস মর্নিং নিউজের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে অভিযোগকারী এসব পাইলটের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে যে, একজন পাইলট নাকি কয়েক মাস আগেই বোয়িংয়ের ফ্লাইট ম্যানুয়ালকে ‘অনুপযুক্ত ও বিধি অনুযায়ী নিরাপত্তা অপ্রতুল বলে’ অভিহিত করেন।

ওই প্রতিবেদনে তাদের হাতে আসা নথির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এর আগেও বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছিল। এসব অভিযোগ পাইলটরা স্বপ্রণোদিত হয়েই করেছিল। অভিযোগে তারা বিমানটির উড্ডয়নের ক্ষেত্রে বিমানটির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

প্রতিবেদনে অটোপাইলট সিস্টেম নিয়ে সমস্যার কথা জানানো হয়। আর তাদের সবাই একটাই অভেযোগ করেছেন যে, বিমান অবতরণের সময়ই মূলত সমস্যায় দেখা দেয়। অনেকেই বলছেন, হঠাৎ করেই বিমান নিচের দিকে যাওয়ার প্রবণতা আছে বোয়িংয়ের বিমানে।

বোয়িংয়ের সফল ৭৩৭ বিমানের সর্বশেষ মডেল হচ্ছে ম্যাক্স (৭, ৮, ৯ এবং ১০)। এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বোয়িং বিভিন্ন ধরণের ৫ হাজার ১১ টি ম্যাক্স বিমানের অর্ডার পেয়েছে। এখন পর্যন্ত সরবরাহ করেছে ৩৫০টি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের দু'টি দুর্ঘটনায় বোয়িং কোম্পানিকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

টিটিএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।