রমজান মাসে লোকসভা নির্বাচন : পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম নেতাদের ক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৩৯ পিএম, ১১ মার্চ ২০১৯

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রমজান মাসে লোকসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় রাজ্যের মুসলিম নেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রমজান মাসকে বাদ রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হতো বলে তারা মনে করছেন।

আগামী ৫ মে থেকে রমজান মাস শুরু হবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ৬, ১২ ও ১৯ মে শেষ তিন দফার নির্বাচন হবে। এভাবে রমজানের মধ্যে নির্বাচন হওয়ায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে রোজা রেখেই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে ১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত সাত দফায় নির্বাচন হবে।

পশ্চিমবঙ্গের পৌর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের মতে, নির্বাচন হল গণতন্ত্রের উৎসব। সব ধর্মকেই তৃণমূল সম্মান করে। কিন্তু এভাবে রমজান পর্যন্ত ভোট টেনে নিয়ে যাওয়া মোটেই ঠিক হয়নি।

দৈনিক ‘পুবের কলম’ পত্রিকার সম্পাদক ও সংসদ সদস্য আহমদ হাসান ইমরান বলেন, ‘রমজান মাসে দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচনি তফসিল তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে মুসলিম ভোটার ও ভোট কর্মীদের ইবাদতে অসুবিধা হবে। দুর্গাপূজা কিংবা নবরাত্রির সময়েও ভোট অনুষ্ঠান করা উচিত নয়। নাগরিকদের ধর্মীয় চেতনাকে অবশ্যই মর্যাদা দিতে হবে।’

রমজান মাসে নির্বাচন প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘ভোট গণতন্ত্রের একটা উৎসব। এই উৎসব রমজান মাসে হওয়ার কারণে সাধারণ ভোটকর্মী থেকে শুরু করে ভোটদাতা, ভোট প্রচারকসহ সকলের জন্যই একটা বাড়তি সমস্যা তৈরি করবে। আমরা আগেই নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিলাম যাতে রমজান মাস ও শুক্রবারকে (জুমাবার) যেন ভোট গ্রহণের দিন থেকে বাইরে রাখা হয়।

সিপিএম নেতা ও সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিমের মতে, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী মুসলিমদের ‘ইমোশন’-এ গুরুত্ব দেন না। প্রধানমন্ত্রী মুসলিম সম্প্রদায়কে গুরুত্ব না দেয়ার জন্যই রমজানের মধ্যে নির্বাচন করাচ্ছেন। আগে চক্ষুলজ্জা ছিল, এখন তাও চলে গেছে। রমজান মাসে নির্বাচন হওয়ায় ভোট প্রচারের সমস্যাও হবে। রমজান মাসে নির্বাচন না করলেই পারত।’

পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার ঐতিহ্যবাহী নাখোদা মসজিদের ইমাম মাওলানা শফিক কাশেমি বলেন, ‘রমজান মাস ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাস। এই মাসে নির্বাচন করা উচিত হয়নি। এতে রোজাদারদের অসুবিধা হবে।’

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ এ কে এম ফারহাদ বলেন, ‘রমজান মাসে কেন নির্বাচন রাখা হল? এই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ভাবা উচিত ছিল। এর ফলে রোজাদারদের অসুবিধায় পড়তে হবে।’

বিধায়ক ডা. এম নূরুজ্জামান বলেন, ‘রমজান মাসে ভোট হলে স্বাভাবিকভাবে মুসলিম সমাজে কিছু সমস্যা দেখা দেবে। রাজ্য সাত দফায় নির্বাচন না করে রমজান মাসের আগেই নির্বাচন শেষ করা উচিত ছিল।’

জামায়াতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি মুহাম্মদ নুরুদ্দিন বলেন, ‘রমজান মাসে নির্বাচন না হওয়া উচিত। এই মাসে নির্বাচন এড়ানো গেলে ভালো হতো। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি খেয়াল রাখলে ভালো করত। তবে এমন নয় যে রমজানে নির্বাচন করাই যাবে না। এ ব্যাপারে খুব বেশি কঠোর অবস্থান নেয়া উচিত নয় বলে আমার ব্যক্তিগত অভিমত।’

রোববার ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা। ৫৪৩ আসনের জন্য আগামী ১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত সাত দফায় নির্বাচন হবে। প্রায় ৯০ কোটি ভোটার নির্বাচনে অংশ নেবেন। ফল ঘোষণা হবে ২৩ মে। পার্সট্যুডে।

এসআইএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।