প্রচণ্ড বিস্ফোরণের পর আগুনের লেলিহান শিখা, গেল ১৫৭ প্রাণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৫৯ পিএম, ১০ মার্চ ২০১৯

ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে বিশোফতু শহরে দেশটির সরকারি বিমান সংস্থা ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে উঠে এসেছে। ৮ জন ক্রু-সহ ১৫৭ আরোহী নিয়ে বোয়িং-৭৩৭ ম্যাক্স-৮ বিমানটি যখন বিধ্বস্ত তখন প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে চারপাশ। এর পরপরই বিমানটি ঢেকে যায় আগুনের লেলিহান শিখায়। বিমান বিধ্বস্তের চার ঘণ্টা পর উদ্ধারকারীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও বাঁচাতে পারেননি কাউকে।

রোববার সকালে আদ্দিস আবাবার বোল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৮ জন ক্রু-সহ ১৫৭ আরোহী নিয়ে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল বোয়িং-৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমানটি। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩৮ মিনিটে উড্ডয়নের ছয় মিনিট পর ৮টা ৪৪ মিনিটে বিমানটির সঙ্গে রাডারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

আদ্দিস আবাবা থেকে ৬২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বদিকের বিশোফতু শহরের কাছে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। সংস্থাটির মুখপাত্র বলেছেন, ইথিওপিয়া এয়ারলাইন্সের বিধ্বস্ত বিমানটির ১৪৯ আরোহী ও আট ক্রুর সবাই মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে ৩৩ দেশের নাগরিক রয়েছেন। ইতোমধ্যে চীনের আট নাগরিক ওই বিমানে ছিলেন বলে জানিয়েছে চীনের ইংরেজি দৈনিক গ্লোবাল টাইমস।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিস্ফোরণের মাত্রা ও আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে ওই সময় আশ-পাশের লোকজন বিধ্বস্ত বিমানটির কাছে যেতে পারেননি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির আদ্দিস আবাবা প্রতিনিধি জিবাত তামিরাত বিশোফতুর স্থানীয় এক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেছেন।

ওই ব্যক্তি বিবিসিকে বলেছেন, তিনি বিমানটির বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানের কাছেই অবস্থান করছিলেন। সকাল পৌনে ৯টার দিকে হঠাৎ প্রচণ্ড বিস্ফোরণের পর আগুনের কুণ্ডলী দেখা যায়। বিস্ফোরণ ও আগুন এত শক্তিশালী ছিল যে আমরা বিমানটির কাছে ভিড়তে পারিনি।

স্থানীয় ওই বাসিন্দা বলেন, পৌনে ৯টার দিকে বিধ্বস্ত হলেও দুর্ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পৌঁছান সকাল ১১টার দিকে। বর্তমানে সেখানে চারটি হেলিকপ্টার পৌঁছেছে। তবে কেউই বাঁচবে না। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের টুইট করা একটি ছবিতে বিধ্বস্ত স্থানের সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেখা যায়।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিওলদে গেব্রেমারিয়াম বলেছেন, দুঃখের সঙ্গে নিশ্চিত করছি, বিমানের কোনো আরোহীই বেঁচে নেই। বিমান দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রী, ক্রু ও অন্যান্যদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তিনি।

বিমানের এক আরোহীর মেয়ে উইন্ডি ওটিয়েনো রয়টার্সকে বলেছেন, বিমান বিধ্বস্তের ব্যাপারে কেউ এখন পর্যন্ত আমাদের কিছু জানায়নি। আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি শুধুমাত্র ভালো কিছুর আশায়। তিনি বলেন, আমি মায়ের জন্য অপেক্ষা করছি। আমরা আশা করছি, তিনি অন্য কোনো ফ্লাইটে আসবেন অথবা ফ্লাইট বাতিল করবেন। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করছেন না।

এদিকে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ টুইটারে দেয়া এক বার্তায় বিমান বিধ্বস্তে হতাহতদের পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। ইথিওপিয়ার এই বিমানের প্রস্তুতকারী সংস্থা বোয়িং বলছে, তারা অত্যন্ত নিবিড়ভাবে বিমান বিধ্বস্তের এ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে।

মাত্র দুই বছর আগে নতুন বোয়িং-৭৩৭ ম্যাক্স ৮ তৈরি করা হয়। এর পরে ইথিওপিয়া এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হয় ২০১৮ সালে। তবে একই মডেলের অপর একটি ইন্দোনেশীয় বিমান পাঁচ মাস বিধ্বস্ত হয়। ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের ওই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ১৯০ জনের প্রাণহানি ঘটে।

আফ্রিকা মহাদেশের বিমান সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ বিমান সংস্থা হিসেবে মনে করা হয় ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সকে। গত বছর এই এয়ারলাইন্স বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় এক কোটি যাত্রী পরিবহন করে।

এসআইএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।