ভারতে এখনও ১৯ ভাগ কম বেতন পান নারীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:১০ পিএম, ০৮ মার্চ ২০১৯

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। মুখে মুুখে নারীদের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও ভারতে এখনও কর্মক্ষেত্রে পুরুষ কর্মীদের তুলনায় ১৯ ভাগ কম বেতন পাচ্ছেন নারীরা। একই পদে থাকা একজন পুরুষ তার নারী সহকর্মীদের চেয়ে বেশি বেতন পাচ্ছেন।

এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে মনস্টার স্যালারি ইনডেক্স সার্ভের সাম্প্রতিক রিপোর্টে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, প্রতি ঘণ্টা কাজ করার জন্য যেখানে নারীরা পান ১৯৬. ৩০ রুপি, সেখানে একই কাজ করে পুরুষরা ১৯ ভাগ বেশি অর্থাৎ ২৪২.৪৯ রুপি পাচ্ছেন।

নারীর সমানাধিকারের চেষ্টায় গত এক বছরেও এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, আগের বছরে যেখানে নারী-পুরুষের মধ্যে বেতনের ব্যবধান ছিল ২০ শতাংশ তা চলতি বছরে এসে কমেছে মাত্র ১ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে মনস্টার ডটকম-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, সরকারি-বেসরকারি উভয় তরফ থেকে চেষ্টার পরেও এক বছরে যদি লিঙ্গভেদে বেতনের ফারাক মাত্র ১ শতাংশ কমার চিহ্ন দেখা যায়, তাহলে তা সত্যিই চিন্তার বিষয়।

শুধু তাই নয়, সেক্ষেত্রে নিজেদের মনেও প্রশ্ন ওঠে যে, সত্যিই কি আমরা এই ব্যবধান ঘোঁচাতে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হয়ে পদক্ষেপ নিতে পেরেছি? তার মতে, সত্যিই এই ব্যবধান কমাতে চাইলে, শিল্প এবং কর্পোরেট ক্ষেত্র, উভয় জায়গাতেই বিশেষভাবে নিয়োজিত দলের উপর ভার দিয়ে, তাদের সুপারিশ মতো পদক্ষেপ করার প্রয়োজন রয়েছে।

তবে কর্মক্ষেত্রে স্তর নির্বিশেষে যে, বেতনের ব্যবধান ২০ শতাংশ এমনটা ভাবলে ভুল হবে বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে। সমীক্ষা চালানোর সময় দেখা গেছে, দেশে অর্ধ-শিক্ষিত (সেমি-স্কিলড) কর্মীদের মধ্যে নারী-পুরুষের বেতনে কোনও ফারাক নজরে না এলেও দক্ষ কর্মীদের মধ্যে (স্কিলড) ব্যবধান এক ধাক্কায় বেড়ে ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু অতি দক্ষ (হাইলি স্কিলড) কর্মীদের পেশার ক্ষেত্রে পুরুষকর্মীরা বেতনের দিক থেকে নারীদের ৩০ শতাংশের মতো বিশাল ব্যবধানে পেছনে ফেলে দিয়েছেন। তবে শুধু লিঙ্গভেদেই যে এই বেতনের ফারাক হচ্ছে তা নয়, চাকরির অভিজ্ঞতাতেও পুরুষরা নারীদের পেছনে ফেলে দিচ্ছেন বলে দাবি করা হয়েছে মনস্টার স্যালারি ইনডেক্স সার্ভের সাম্প্রতিক ওই রিপোর্টে। সেখানে দেখা গেছে, ১০ বছর বা তারও বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পুরুষ কর্মীরা সর্বাধিক ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেতনের ব্যবধানে পেছনে ফেলেছেন নারীদের।

কোন কোন পেশার ক্ষেত্রে এই বৈষম্য সর্বাধিক। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র ২৬ শতাংশ, নির্মাণক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে ২১ শতাং। ব্যাংকিং এবং আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্রই হল এমন ক্ষেত্র, যেখানে পুরুষ-নারীর মধ্যে বেতনের ব্যবধান মাত্র ২ শতাংশ যা অন্যান্য সব ক্ষেত্র থেকে কম।

শুধু বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, সার্ভে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, চাকুরিজীবী ৬০ শতাংশ নারীই মনে করেন কর্মক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে পুরুষদের তুলনায় বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। একই সঙ্গে সংস্থায় উচ্চপদে পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বঞ্চিত করা হয় বলে সমীক্ষকদের জানিয়েছেন ৩৩ শতাংশ নারী।

এর সঙ্গেই কর্মক্ষেত্রে নারীদের যৌন হেনস্থার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হয়েছে সমীক্ষায়। নারীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করলেও, তার মধ্যে ৮৬ শতাংশই চাকুরি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি চাকরিস্থল বাছার ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বলে মনে করেন। পাশাপাশি, ৫০ শতাংশ নারী রাতের শিফটে কাজ করা নিরাপদ নয় বলেই মতপ্রকাশ করেছেন।

টিটিএন/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।