‘জীবন্মৃত’ এক প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৫১ এএম, ০৬ মার্চ ২০১৯

আলজেরিয়ার চারবারের প্রেসিডেন্ট আব্দেল আজিজ বুতেফলিকা। দেশের পরবর্তী নির্বাচনেও অংশ নেবেন তিনি। কিন্তু নিজের পঞ্চম মেয়াদের জন্য নির্বাচন করতে ইচ্ছুক এই প্রেসিডেন্টকে তার সমালোচকরা ‘জীবন্মৃত’ বলে ডাকেন।

কেন তাকে জীবন্মৃত বলা হয়? এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। বর্তমানে আব্দেল আজিজ বুতেফলিকার বয়স ৮২ বছর। কিন্তু এই বয়সেও তিনি অবসরে যেতে চান না। ২০১৩ সালে স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে কার্যত তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এরপর থেকেই তাকে আর প্রকাশ্যে কোনো কথা বলতে শোনা যায়নি। কিন্তু তারপরেও দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন করবেন তিনি।

আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আগামী ১৮ এপ্রিলের ভোটে তিনি জিতেও যেতে পারেন। যদিও ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পর শাসন ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভও দেখা যাচ্ছে।

অসুস্থ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নিতে সারাদেশে লাখ লাখ মানুষ বিশেষ করে তরুণরা শুক্রবারও রাস্তায় নেমে আসে।

আরব বসন্ত শুরু হওয়ার পর এটাকেই সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ বলে মনে করা হচ্ছে। রাজধানী আলজিয়ার্সে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে হয়েছে। যদিও তাদের এসব প্রতিবাদ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট বুতেফলিকার তেমন কিছুই জানেন না। কারণ বর্তমানে তিনি সুইজারল্যান্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আব্দেল আজিজ বুতেফলিকার চরম সমালোচকরা তাকে ‘দ্য লিভিং ডেড’ বা জীবন্ত লাশ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।

উত্তর আফ্রিকা বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা মাস জানিয়েছেন, অসুস্থতা ও কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারার কারণে বিরোধীরা তাকে ‘দ্য ফ্রেম’ও বলে থাকেন। এমনকি প্রার্থিতা ঘোষণার দিনসহ অনেক অনুষ্ঠানেই তার বাধাই করা ছবি রাখা হয়েছিল তার নিজের উপস্থিতির পরিবর্তে।

তার অবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় গত সোমবার প্যারিসে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূতকে একটি বিবৃতি দিতে হয়েছিল যে, প্রেসিডেন্ট এখনও জীবিত আছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট যদি তার প্রাত্যহিক কাজ করতে না পারেন তাহলে তার দায়িত্বে কে রয়েছে এমন প্রশ্নও ভাবাচ্ছে সবাইকে।

আলজেরিয়াকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা হলেও দেশটি পরিচালিত হয় আসলে ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা অনুযায়ী। অসুস্থ প্রেসিডেন্ট কোন কার্যক্রমে অংশ নিতে না পারায় একদল সামরিক কর্মকর্তা এবং অনির্বাচিত ব্যবসায়ী দেশ চালানোর ক্ষেত্রে বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এবং তারাই রাজত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

৯০ এর দশকে গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে উত্থান হয় প্রেসিডেন্ট বুতেফলিকারের। এরপর থেকেই ক্ষমতা রয়েছে রাজনীতিক ও সামরিক একটি যৌথ মাফিয়া চক্রের হাতে। তারাই এরপর মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হয়।

কিন্তু এখন প্রেসিডেন্ট বুতেফলিকার দুর্বল হয়ে পড়েছেন। আর এ সুযোগেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে নানা দল ও উপদল। অন্যদিকে তার পুন:নির্বাচনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে তরুণরা।

তারা শ্লোগান দিচ্ছে ‘বাই বাই বুতেফলিকা’। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত ত্রিশ বছরের মধ্যেিএটাই দেশের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ যার নেতৃত্বে রয়েছে ছাত্র ও বিভিন্ন খাতের তরুণরা।

বয়সে তরুণ এ দেশটির জনসংখ্যা চার কোটির সামান্য বেশি। এর মধ্যেই রোববার রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রেসিডেন্টের একটি চিঠি পড়ে শোনানো হয়েছে।

সেখানে তিনি বলেন, প্রতিবাদকারীদের গভীর কান্না আমি শুনেছি। তাই তিনি অঙ্গীকার করেছেন যে, পুননির্বাচিত হলে রাজনৈতিক সংস্কার ও আরেকটি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের জন্য তিনি একটি কনফারেন্সের আয়োজন করবেন। যদিও নতুন প্রজন্মের কাছে এ ধরনের ভারী কথাবার্তার কতটা মূল্য আছে সেটি সময়ই বলে দেবে।

টিটিএন/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।