আসলে কী ঘটেছিল বালাকোটে?
পাঁচদিন আগে (২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯) সীমানা পেরিয়ে পাকিস্তানের বালাকোটে জঙ্গিগোষ্ঠী জয়েশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটিতে আঘাত হানে ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান। নয়াদিল্লির দাবি, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে জয়েশ-ই-মোহাম্মদের সবচেয়ে বড় জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে ভারতীয় বিমান।
তবে সীমানা পেরিয়ে পাক ভূখণ্ডে আঘাত হানার পক্ষে প্রমাণ হিসেবে কোনো ছবি এখনো প্রকাশ করেনি ভারত। এ নিয়ে দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সমালোচনা শুরু করেছেন ভারতের বিরোধীদলগুলোর নেতা-কর্মীরা।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রশংসা করলেও ওই অভিযানের তথ্য-প্রমাণ প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। একই দাবি করেছেন উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বহুজন সমাজবাদী পার্টির নেতা মায়াবতী।
সেদিন কী ঘটেছিল সেই চিত্র এখনো প্রকাশ না করলেও এতে সহায়ক হতে পারে স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি। দিল্লি বলছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৩ টার দিকে সীমানা পেরিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আকাশে প্রবেশ করে ভারতীয় বিমানবাহিনী। ওই রাতের অভিযানে ১২টি মিরাজ-২০০০ বিমান থেকে ইসরায়েলের বিশেষ বোমা ফেলে জয়েশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে বলছে, দুটি আলাদা সূত্র থেকে বালাকোট অভিযানের উপগ্রহ চিত্র পেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতে দেখা যায়, বালাকোটে জয়েশের ছয়টির মধ্যে পাঁচটি ঘাঁটিতে আঘাত করেছে ভারতীয় বিমানবাহিনী।
স্যাটেলাইটে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, পাঁচটি বাড়ির মধ্যে বেশ কয়েকটি ছোট ছিদ্র দেখা যাচ্ছে। এ ছোট ছিদ্র দিয়েই ভবনগুলোতে ঢুকে ইসরায়েলি স্পাইশ-২০০০ গ্লাইড বোমা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলি এই বোমা কোনো ভবনে আঘাত হানলে সেটি ধ্বংস নাও হতে পারে। তবে এই গুণের জন্য অনেকে গ্লাইড বোমাকে অদৃশ্য অস্ত্র হিসেবে অভিহিত করেন।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে আগে জানানো হয়েছিল যে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান মিরাজ সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের অদূরে বালাকোটে প্রবেশ করে। টার্গেট সুনির্দিষ্ট করার পর বোমা নিক্ষেপ করে।
স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া অস্পষ্ট ছবির ব্যাপারে ভারতীয় একটি সূত্র বলছে, বালাকোটের আকাশে মেঘ জমে থাকায় ভারতীয় উপগ্রহ স্পষ্ট ছবি তুলতে পারেনি। তবে ভারতের এ দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অস্ট্রেলিয়ার ইন্টারন্যাশনাল সাইবার পলিসি সেন্টার। সাইবার পলিসির কর্মকর্তা নাথান রাসার বলেছেন, ভারতের দাবি নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে।
তিনি বলেছেন, হামলার পরের দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে স্যাটেলাইটের ছবি সংগ্রহ করেছে প্ল্যানেট ল্যাব ইনকরপোরেশন। এই ছবি পাওয়ার পরভারত সরকােরের অভিযান চালানোর দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
নাথান বলেছেন, ছবিতে যেসব এলাকা দৃশ্যমান রয়েছে, তাতে কিংবা তার আশপাশের এলাকায় কোনো ধরনের স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশিত ছবিতেও হামলার স্থানে বেশ কিছু গর্ত দেখা গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ভারতীয় বিমানবাহিনী টার্গেট মিস করেছে।
এদিকে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর স্পাইস-২০০০ গ্লাইড বোমা টার্গেট মিস করেছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, যেসব এলাকায় গর্ত দেখা যাচ্ছে, সেখানে জঙ্গিদের ইম্প্রোভারিসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের প্রশিক্ষণ শিবির থাকতে পারে।
এসআইএস/পিআর