কে এই হামজা বিন লাদেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৫২ এএম, ০২ মার্চ ২০১৯

জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়েদার ভবিষ্যত নেতা হচ্ছেন প্রয়াত আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের ছেলে হামজা বিন লাদেন। ওসামার এই প্রিয় ছেলের বয়স ৩০ বছর। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তাদের ধারণা, আল-কায়েদাকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং সন্ত্রাসবাদে সক্রিয় হয়ে উঠতে নিজেকে একজন দক্ষ নেতা হিসাবে গড়ে তুলছেন হামজা।

হামজা বিন লাদেনের বিষয়ে অনেক কিছুই এখনও অজানা। তবে যতটুকু জানা গেছে তা থেকে এটা স্পষ্ট যে আর দশটা শিশুর মতো শৈশব পাননি হামজা। তার শৈশবের কোন ছবিতে পারিবারিক ছুটি কাটানোর কোন মুহূর্ত নেই। এর পরিবর্তে হামজা বিন লাদেনকে অল্প বয়স থেকেই সামরিক পোশাক পরা আর হাতে আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল পরিচালনা করতে দেখা গেছে। ব্যাপারটা এমন যেন সেটি কোন খেলনা।

আল-কায়েদার প্রয়াত নেতা ওসামা বিন লাদেনের এই ছেলেকে অনেক অল্প বয়সেই তার বাবার জিহাদি ধারণা দেয়া হয়েছে। এটাকে তারা পবিত্র যুদ্ধ হিসেবে মনে করতো।

২০০৫ সালে আল-কায়েদা প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আফগানিস্তান সীমান্তে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আক্রমণে অংশগ্রহণকারী জঙ্গিদের মধ্যে লাদেনের ছেলেও উপস্থিত ছিলেন। তখন হামজার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র হামজার মাথার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে। তার সম্পর্কে যে কোন তথ্য সরবরাহের জন্য ১০ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত পুরস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

southeast

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই তাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। তারা বলছে, হামজা আল-কায়েদা নেটওয়ার্কের ‘প্রধান নেতা’ হিসাবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছেন।

হামজা সম্পর্কে খুব অল্পই জানা গেছে। ইউনাইটেড স্টেটস অফ জিহাদ বইটির লেখক পিটার বার্জেন জার্মান টিভি নেটওয়ার্ক ডয়েচে ভেলেকে বলেন, হামজার বাবা তাকে অল্প বয়সেই আল কায়েদার মতাদর্শের হাতেখড়ি দিয়েছেন।

ওই বয়সেই সামগ্রিক জিহাদি বার্তার ব্যাপারে খুব বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন হামজা। এ কারণে হামজাকে সত্যিকারের বিশ্বাসী হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে হামলার ঘটনার পর ওসামা বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বর শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

লন্ডনভিত্তিক আল-শারক আল-আওসাত পত্রিকার মতে, ওই হামলার পরের বছর হামজার লেখা কয়েকটি কবিতা ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। সেখানে হামজা নিজের এবং তার পরিবারের বাস্তুচ্যুত হওয়া থেকে শুরু করে নানা বিপদের বর্ণনা দেন।

ওসামা বিন লাদেনের বয়স হওয়ার সাথে সাথে হামজা নিজেকে আল-কায়েদার কর্মকাণ্ডে আরও বেশি জড়িয়ে নেন। সে সময় তার ব্যাপারে অনেক ধরণের গুজব সামনে আসে।

বিশেষ করে ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর গোপন অভিযানে ওসামা বিন লাদেন নিহতের ঘটনা ঘিরে নানা বিভ্রান্তি দেখা দেয়।

মার্কিন কর্মকর্তাদের প্রাথমিক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, মার্কিন অভিযানে হামজা নিহত হয়েছেন। তবে পরে এটি নিশ্চিত করা হয় যে, ওই অভিযানে হামজা নয়, বিন লাদেনের অন্য ছেলে খালিদ মারা গেছেন।

southeast

২০১৫ সালের আগস্টে হামজা জনসমক্ষে ফিরে আসেন। আল-কায়েদার নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরী এ নিয়ে একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি হামজাকে দলের একজন আনুষ্ঠানিক সদস্য এবং ডেরা থেকে বেরিয়ে আসা সিংহ হিসেবে পরিচয় দেন।

এরপর হামজা কাবুল, বাগদাদ এবং গাজায় তার দলের অনুসারীদের যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র অর্থাৎ লন্ডন, প্যারিস ও তেল আবিবের ওপর আক্রমণের আহ্বান জানান।

হামজা বিন লাদেন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা চালাতে বিভিন্ন সময় পুণরায় আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে জেরুজালেম ইস্যুতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ার সময় তিনি জেরুজালেমকে আখ্যা দেন এমন এক কনে যাকে যৌতুক হিসেবে রক্ত দিতে হয়েছে।

তিনি তার পিতার মৃত্যুর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া সৌদি আরবের শাসকদের বিরুদ্ধে এবং ইয়েমেনের মার্কিন সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদের প্রস্তুতি নিতে আরব উপদ্বীপে আল-কায়েদার সমৃদ্ধ শাখা একিউএপি-তে যোগদানের জন্য সৌদি নাগরিকদের প্রতিও আহ্বান জানান বিন লাদেনের এই ছেলে।

২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ওসামা বিন লাদেনের কম্পিউটারে পাওয়া বেশকিছু নথি প্রকাশ করে। তার মধ্যে হামজার বিয়ের ভিডিও ফুটেজও পাওয়া যায়।

সেখানে দেখা যায় হামজা যাকে বিয়ে করেছেন তিনি ৯/১১ হামলার প্রধান বিমান ছিনতাইকারী মোহাম্মাদ আত্তার মেয়ে।
ধারণা করা হয় যে বিয়ের অনুষ্ঠান ইরানে হয়েছিল। যুক্তরাজ্যের রক্ষণশীল এমপি প্যাট্রিক মার্সার একবার হামজাকে সন্ত্রাসের মুকুটধারী যুবরাজ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন।

টিটিএন/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।