পরিচ্ছন্ন কর্মীদের পা ধুয়ে বিপাকে মোদি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১৬ এএম, ০১ মার্চ ২০১৯
ফাইল ছবি

পরিচ্ছন্ন কর্মীদের পা ধুয়ে দিয়ে বিপাকে পড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যদিও বিজেপির দাবি, মহাত্মা গান্ধীর পর আর কোনো নেতা এভাবে নিজেকে সমর্পণ করেননি। তবে বিরোধীদের বক্তব্য, ভোটের মুখে এটা দলিতদের মন জয়ের চেষ্টা।

ভারতে সাধারণ নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। এরই মধ্যেই বেশ চমক সৃষ্টির চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী। গত সপ্তাহে তিনি উত্তরপ্রদেশে কুম্ভের সঙ্গমে স্নান সেরে গেরুয়া বসন পরে পূঁজা করেন। তারপর পাঁচ পরিচ্ছন্ন কর্মীর পা ধুয়ে দেন। এই কর্মীরা কুম্ভমেলা পরিচ্ছন্নতার কাজে নিযুক্ত। টেলিভিশনে সরাসরি এ দৃশ্য দেখানো হয়। মোদি পানি দিয়ে নরেশ কুমার, ছবি, পেয়ারে লাল, জ্যোতি ও হোরি লাল নামে দলিত পরিচ্ছন্ন কর্মীদের পা ধুয়ে দেন।

ভোটের আগে বিষয়টি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, গান্ধীর পর এই প্রথম কোনো নেতা দেশের পশ্চাৎপদ শ্রেণির মানুষের সেবায় এভাবে নিজেকে সমর্পণ করলেন।

তবে বিরোধীরা মোদির এ কাজের তীব্র সমালোচনা করছেন। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র এটাকে নির্বাচনের কর্মসূচি বলে মন্তব্য করেছেন। আন্তর্জাতিক এক গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘এটা একেবারেই ভোটকেন্দ্রিক প্রয়াস। দলিতদের মন জয় করতে চাইছেন। তবে তাতে লাভ হবে না।’

প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতার ব্যাখ্যা, ‘গতবার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, তার একটাও পূরণ করতে পারেননি মোদি। সে কথা বুঝতে পেরে প্রধানমন্ত্রী নানান কৌশল নিচ্ছেন। এটা দেশের জনতার আবেগে সুড়সুড়ি দেয়ার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।’

বিজেপির প্রধান বিরোধী কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা পবন খেরা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর যে দায়িত্ব পালন করা উচিত, তা কেন মোদি করেন না? দাদরিতে গোমাংস রাখার দায়ে সংখ্যালঘু হত্যা, পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা, কাশ্মীরি ছাত্রদের উপর হামলার পর কেন নীরব থাকেন তিনি?

জাতীয় স্তরে কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও পশ্চিমবঙ্গে সেই জায়গায় রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডেও এটাকে ভোটের চমক বলে মন্তব্য করেছেন। প্রবীণ এ তৃণমূল নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রচার ভালোবাসেন। স্নান করে তাই পরিচ্ছন্ন কর্মীদের পা ধুয়ে দিয়েছেন। মোদির শাসনে গত চার-পাঁচ বছরে দলিতরা খুব সংকটে রয়েছে। সেটা তারা ভুলে যাবে না। পা ধুয়ে দিলেও এই সমাজের সমর্থন বিজেপি পাবে না।’

উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, দলিত নেত্রী মায়াবতীর সঙ্গে সহমত পোষণ করে সাধন পাণ্ডে বলেন, ‘বিজেপি উচ্চবর্ণের দল বলে পরিচিত। ওরা দলিতদের হিতাকাঙ্ক্ষী নয়। চমক দিয়ে ভাবমূর্তি বদল করা যাবে না।’

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী মোদির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘ভোটের আগে পা ধুয়ে দেয়া মানে ভোটের পর উনি পরিচ্ছন্ন কর্মীদের মাথায় পা রেখে চলবেন। এখন দেখাতে চাইবেন তিনি দলিতের বন্ধু, কিন্তু নির্বাচনের পর শিল্পপতি আদানি, আম্বানিরা হবেন ওনার সঙ্গী।’

বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করছে, প্রধানমন্ত্রী পরিচ্ছন্ন কর্মীদের পা ধুয়ে এক মহান বার্তা দিতে চেয়েছেন দেশবাসীকে। সমাজে এখনও যে অস্পৃশ্যতা, ভেদাভেদের বিষ আছে, তা দূর করবে দেশের শীর্ষ নেতার এই চেষ্টা।

তাদের এ দাবির প্রেক্ষিতে সুজন বলেন, ‘দলিতদের প্রয়োজন না মিটিয়ে এই বার্তা দেয়া মূল্যহীন। পিছিয়ে থাকা এসব মানুষের দাবি, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, ১৮ হাজার টাকা ন্যূনতম মাসিক বেতন, উন্নততর জীবনযাত্রা। এসব পূরণে সরকার কী করেছে?’

এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের দলিত ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি রাজু ঘোষ বলেন, ‘ভোটের আগে এটা একটা মার্কেটিং কনসেপ্ট। আমরা এটা মানি না। এখন দলিতদের পা ধুয়ে মোদি বোঝাতে চাইছেন, সংখ্যালঘু, দলিতরা সবাই সমান। কিন্তু এখন তো অত্যাচার আগের থেকে বেশি হচ্ছে। কৃষকরা অত্যাচারিত হচ্ছেন। বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছেন দলিতরা। দলিতদের জন্য সংরক্ষিত আসন উচ্চবর্ণের কাছে মোটা টাকায় বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।’

এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।