বাজছে পাক ভারত যুদ্ধের দামামা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৪৪ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় ভারতের কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর (সিআরপিএফ) গাড়ি বহরে প্রাণঘাতী হামলার জেরে ইসলামাবাদের সঙ্গে নয়াদিল্লির নজিরবিহীন উত্তেজনা চলছে। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জয়েশ-ই-মোহাম্মদ ওই হামলা চালায়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ এনে হামলার কড়া জবাব দিতে সেনাবাহিনীকে অনুমতি দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছেন, আঘাত এলে পাল্টা দিতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে না ইসলামাবাদ। এমনকি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার জাবেদ বাজওয়া বলেছেন, ভারত হামলা চালালে তারা পুরোমাত্রার জবাব দিতে প্রস্তুত আছেন।

দুই দেশের শীর্ষ পর্যায় ও সেনাবাহিনীর এমন বাকযুদ্ধের মাঝে এশিয়ায় কী তাহলে যুদ্ধের দামামা বাজছে? প্রতিবেশি দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী এ দুই দেশ শেষ পর্যন্ত সামরিক সংঘাতে জড়াতে পারে কী? এমন প্রশ্ন এখন বাতাসে ভাসছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলায় ৪৯ সিআরপিএফ জওয়ানের প্রাণহানির ঘটনায় ভারত-পাকিস্তান সশস্ত্র সংঘাতে জড়াতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ। তবে সামরিক এই সংঘাতে প্রতিবেশি দুই দেশের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের শঙ্কা নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।

পারভেজ মুশাররফ বলেছেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের মাঝে যদি কোনো ধরনের যুদ্ধও লেগে যায়, তাহলে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হবে; এমন কথা বলাটাও হাস্যকর। পাকিস্তান যদি একটি বোমা ব্যবহার করে, ভারত করবে ২০টি। তখন পাকিস্তান করবে ৫০টি; এটা হবে সর্বনাশা।’

সাবেক পাক এ স্বৈরশাসক বলেন, ‘যারা এ ধরনের শঙ্কার কথা বলছেন, আসলে যুদ্ধের ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণাই নেই।’ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র ভীতি তৈরির জন্য উত্তম, কিন্তু এটা কোনো পক্ষেরই ব্যবহার করা উচিত নয়। পাকিস্তান-ভারত সম্পর্ক প্রচণ্ড উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। তবে গত ১০ মাস ধরে এই উত্তেজনা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

পারভেজ মুশাররফ বলেছেন, পাক-আফগান সম্পর্ক এখন তলানিতে পৌঁছেছে। সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য উভয় দেশের কাজ করা উচিত। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জেনারেল মুশাররফ বলেন, আফগানিস্তান আবারো গৃহযুদ্ধের দিকে এগাচ্ছে এবং এবারও তালেবান বিজয়ী হবে।

পাকিস্তানের সাবেক এ প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে কাবুলে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে প্রক্সি যুদ্ধ শুরু হবে। কারণ আফগানিস্তানে তালেবানকে সমর্থন করছে পাকিস্তান এবং উত্তরাঞ্চলীয় গোষ্ঠীগুলোর জোটকে সমর্থন করছে ভারত। এমন পরিস্থিতিতে যদি যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায় তাহলে সোভিয়েত যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে সেখানে।

তবে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নে বর্তমান ক্ষমতাসীন ইমরান খান নেতৃত্বাধীন সরকারের নেয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন পারভেজ মুশাররফ। তিনি বলেছেন, তারা সব সময়ই আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সব সময় পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে সৌদি এবং আমিরাত। সম্ভাব্য সব উপায়েই পাকিস্তানকে সহায়তা করেছে তারা। তবে আমাদের সম্পর্ক নষ্টের জন্য দায়ী নওয়াজ শরীফ।

অল পাকিস্তান মুসলিম লীগের (এপিএমএল) প্রতিষ্ঠাতা পারভেজ মুশাররফ। দুবাইয়ে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি। পাকিস্তানের আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলটিকে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সংগঠিত করার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক এ স্বৈরশাসক।

৭৫ বছর বয়সী জেনারেল মুশাররফ ২০১৬ সাল থেকে দুবাইয়ে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে রয়েছেন। সংবিধান স্থগিত করে ২০০৭ সালে দেশটির ক্ষমতা দখল করায় বর্তমানে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ২০১৬ সালে চিকিৎসার জন্য আদালতের বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশের বাইরে গেলেও এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে ফেরেননি তিনি।

এসআইএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।