এবার কাশ্মীরি চিকিৎসককে কলকাতা ছাড়তে হুমকি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৪৩ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলায় ৪০ জনেরও বেশি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী নিহত হওয়ার পর ভারতের নানা জায়গায় কাশ্মীরিদের হেনস্তা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমেও পুলওয়ামার ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে অনেকেই কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
সম্প্রতি এমন ঘটনা কলকাতায়ও ঘটতে দেখা গেছে। প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কলকাতায় বসবাসরত এক চিকিৎসক হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিরাপত্তার স্বার্থে ওই চিকিৎসকের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
অভিযোগ পেয়ে তার বাড়িতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে সরকার। ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, সম্প্রতি তিনি বাজার থেকে ফেরার সময় কিছু লোক তাকে ঘিরে ধরে এবং হুমকি দেয় যে তাকে সন্তানদের নিয়ে কাশ্মীরে ফিরে যেতে হবে।
তার দুই সন্তানই দক্ষিণ কলকাতার একটি নামকরা স্কুলে পড়ে। তাদেরও হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের সদস্য প্রসূন ভৌমিক বলেন, ওই চিকিৎসকের দুই শিশুকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব আমাদের। তাই প্রশাসনকে যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে বলেছি আমরা। চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন এবং অন্যান্য নাগরিক সংগঠনও ওই চিকিৎসকের পাশে দাঁড়িয়েছে।
পুলওয়ামার ঘটনার পর ভারতের নানা জায়গায় কাশ্মীরিদের হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গকে মনে করা হতো সব ধর্মের সম্প্রীতির স্থান। অন্য প্রদেশের মানুষকে এখানে হেনস্থার শিকার হতে হয় না। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বা দাঙ্গার ঘটনাও ঘটেছে এই রাজ্যে।
গত এক সপ্তাহে আড্ডা, আলোচনা বা সামাজিক মাধ্যম অথবা বাস্তবজীবনে দেখা যাচ্ছে পুলওয়ামার জঙ্গী হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা দিয়ে শুরু হয়ে কখনও তা পৌঁছে যাচ্ছে মুসলিম বিদ্বেষে কখনও বা কাশ্মীরের মানুষের বিরুদ্ধে।
প্রসূন ভৌমিক বলেন, যারা ফেসবুকে এ ধরণের মন্তব্য লিখছে বা বলে বেড়াচ্ছে, তারা দেশপ্রেমী নয়, তারা দ্বেষপ্রেমী। জঙ্গী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমান বিদ্বেষ বা কাশ্মীরের মানুষদের হেনস্থার ঘটনায় খুব একটা বিস্মিত নন অধ্যাপিকা মীরাতুন নাহার।
তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে বা আমাদের বাঙালিদের সম্পর্কে আমরা যে উচ্চ ধারণা পোষণ করে থাকি, সেটা অনেকদিন ধরেই নড়বড়ে হয়ে গেছে। যারা ওই হামলা চালালো, তাদের তো হাতের কাছে পাচ্ছে না মানুষ। কিন্তু এরকম একটা ঘটনা নিয়ে আবেগও তৈরি হয়েছে, ক্ষোভও জমেছে। তাই মূল চক্রীদের না পেয়ে সফট টার্গেটের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে।
মীরাতুন নাহার বলেন, কাশ্মীরে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তাই নিরীহ কাশ্মীরিদের টার্গেট করা হচ্ছে। আর ধর্ম বিশ্বাসে যেহেতু তারা মুসলমান, তাই সাধারণ মুসলমানদেরও হেনস্থা করা হচ্ছে। এইসব ঘটনাতেই বোঝা যায় যে, আমরা তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত বলে যারা দাবি করি, আমরাও সাম্প্রদায়িকতাকে মন থেকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলতে পারিনি।
প্রসূন ভৌমিক জানিয়েছেন, ওই কাশ্মীরি চিকিৎসক মঙ্গলবার রাতে তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে হুমকির মুখেও তিনি কলকাতা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাচ্ছেন না। তিনি বলেছেন, এটাই তার শহর, তিনি এখানেই থাকবেন।
টিটিএন/জেআইএম