চলে গেলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ‘চুম্বন নায়ক’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৫ এএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
যুদ্ধশেষে টাইমস স্কোয়ারে জর্জ ও গ্রেটার সেই বিখ্যাত ছবি

নির্বাক একটা ছবি, নিছকই একটা চুম্বন দৃশ্য আসলেই কি তাই! বিশ্বজুড়ে শান্তি ঘোষণা করা সেই ছবি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী দুনিয়া ভুলতে পারেনি। গত রোববার পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন সেই ছবির নাবিক-নায়ক জর্জ মেন্ডোসা। ছবির নায়িকা গ্রেটা ফ্রিডম্যান অবশ্য আরও আগেই পৃথিবী ছেড়েছিলেন। এবার ৯৫ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন জর্জ। মাত্র দু’দিন পরেই ছিল তার জন্মদিন।

তারিখটা ছিল ১৯৪৫ সালের ১৪ আগস্ট। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করে অক্ষশক্তির বড় মিত্র জাপান, শেষ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সে খবর ছড়াতেই রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছিল পৃথিবীর দেশে দেশে। এরকমই হাজার হাজার যুদ্ধক্লান্ত নিউইয়র্কবাসীর মধ্যে সে দিন ছিলেন জর্জ-গ্রেটাও। যুদ্ধ জয়ের আনন্দে ভাসা শহরে হঠাৎই কাছাকাছি এসে পড়েন নাবিক জর্জ ও নার্স গ্রেটা। দু’জনেরই বয়স তখন একুশ। শান্তির আনন্দ, আবেগ, উচ্ছ্বাস মিলেমিশে সেদিন একটা অন্যরকম মুহূর্তের জন্ম নেয়। সাদা পোশাকের গ্রেটা মিশে গিয়েছিলেন নাবিকের কালো ওভারকোর্টে। জয়ের আনন্দে আত্মহারা জর্জ অপরিচিতা গ্রেটার কোমর জড়িয়ে গভীর চুম্বন এঁকে দিয়েছিলেন তার ঠোঁটে।

দীর্ঘদিন পর্যন্ত কেউ জানতই না, ছবির নায়ক-নায়িকার পরিচয়। ছবিটি বিখ্যাত হওয়ার পরে অন্তত ১১ জন দাবি করেন, তারাই ওই ছবির নাবিক। আর অন্তত তিন নারী দাবি করেছিলেন তারাই ছবির চুম্বনরত তরুণী। ২০১২ সালে লরেন্স ভেরিয়ার লেখা ‘দ্য কিসিং সেলর : দ্য মিস্ট্রি বিহাইন্ড দ্য ফটো দ্যাট এন্ডেড ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু’ বইয়ে মেলে জর্জ ও গ্রেটার যাবতীয় তথ্য। লেখক জানান, প্রযুক্তির সাহায্যেই ওই ছবির নায়ক-নায়িকার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছিলেন তিনি।

kiss

মূর্তিতে জর্জ ও গ্রেটা

টাইমস স্কোয়ারে সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন চিত্রসাংবাদিক আলফ্রেড আইজেনস্টাট। কিছু দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের এক জনপ্রিয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয় সেই বিখ্যাত ছবি। তবে ছবির নায়িকা তা দেখেছিলেন প্রায় ১৫ বছর পর ১৯৬০ সালে। পরে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, সেদিন শুধুমাত্র আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ছিল অপরিকল্পিত ওই চুম্বন। জর্জও জানান, গ্রেটাকে তিনি ওই চুমু খেয়েছিলেন কিছু না বুঝেই। রক্তক্ষয়ী বিশ্বযুদ্ধ শেষের আনন্দে কিছুটা মদ্যপানও করেছিলেন সেদিন। সব মিলিয়ে ঘটে যায় ঘটনাটা।

সে সময় টাইমস স্কয়ারে হাজির ছিলেন জর্জের প্রেমিকা রিটা পেট্রিও। পেশায় তিনিও ছিলেন নার্স। পরে রিটাকেই বিয়ে করেন জর্জ। বিখ্যাত ওই চুমু নিয়ে নাকি জর্জের সঙ্গে রীতিমতো মস্করা করতেন তিনি।

বছর তিনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন গ্রেটা। এবার তার কাছে চলে গেলেন জর্জও। পড়ে রইল সেই ছবি। রয়ে গেল নিউইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে তাদের মূর্তি ‘আনকন্ডিশনাল সারেন্ডার’ (নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ)। আর রয়ে গেল শান্তির আন্তর্জাতিক বার্তাটুকু। সূত্র : আনন্দবাজার

এমএমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।