পেঁয়াজ ছুঁলেই আসছে কান্না


প্রকাশিত: ০৩:০৮ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০১৫

কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না পেঁয়াজের ঝাঁঝ। সরকারের আমদানির সিদ্ধান্তেও কোনো প্রভাব নেই নিত্য ব্যবহার্য এ পণ্যের বাজারে। দুই দিনের ব্যবধানের কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে শতকে পৌঁছেছে পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে বুধবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

পেঁয়াজের লাগামহীন দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। অন্যদিকে, পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে অনেক বড় ব্যবসায়ী পেঁয়াজ মজুদ করছেন। ফলে পাইকারি বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। এতে দফায় দফায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।

জানা গেছে, ভারত সরকার শনিবার দ্বিতীয় দফায় পেঁয়াজের রফতানি মূল্য প্রতি টনে দুইশ ৭৫ ডলার বাড়িয়েছে। ফলে পেঁয়াজের ন্যূনতম রফতানি মূল্য প্রতি টন সাতশ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর আগে প্রথম দফায় গত ২৬ জুন রফতানি মূল্য দুইশ ২৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে চারশ ২৫ ডলার করে ভারত সরকার। ফলে বাংলাদেশের বাজারে পড়ছে এর প্রভাব।

রাজধানী মগবাজার, খিলগাঁও, মুগদা, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজারে বুধবার দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৯৫ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। পেঁয়াজের দাম সম্পর্কে মুগদার মুদি ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা খুচরা ব্যবসায়ীরা শ্যামবাজার থেকে পাইকারি দরে পেঁয়াজ এনে বিক্রি করি। তিন দিন আগে শ্যামবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আমাদের বেশি দামে কেনা তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।

রামপুরার বণশ্রীবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা আব্দুল খালেক বলেন, গত শনিবার পেঁয়াজ কিনেছি ৭০ টাকা দরে আজ সেই পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা। নিত্যপ্রয়োজীয় খাদ্যের দাম যদি তিন দিনে ৩০ টাকা বৃদ্ধি পায় তাহলে আমরা কি করে চলবো?

এদিকে, দাম নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজারে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি বন্দরগুলোকে পেঁয়াজের চালান দ্রুত ছাড় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। একই সঙ্গে আমদানিতে সহজে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, কিছু মুনাফাখোর মজুতদার ও ব্যবসায়ীরা কৌশলে দেশীয় পেঁয়াজ মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তিনগুণ দামে বিক্রি করছেন। রমজান মাসে পেঁয়াজের কেজি ছিল মাত্র ৩২ টাকা। সেই পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা দরে।

অপরদিকে, সরকারি বিপণনকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) বুধবার বাজারদরের যে তথ্য দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের দর ৯০ টাকা।

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলের হিসাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২২-২৩ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, দেশের কৃষকরা গত মৌসুমে ১৯ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন করেছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করে, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ও আমদানি ভালো থাকায় দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তাই সোমবারের জরুরি বৈঠকে অতিরিক্ত মুনাফা রোধে অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আমদানিকারকরা জানান, হঠাৎ দর বৃদ্ধিতে কমেছে পেঁয়াজের ভোক্তা চাহিদা। তারপরও বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি আরো বাড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি পাকিস্তান, ভারত, মিসর ও চীন থেকে পণ্যটি আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। তবে মিয়ানমার থেকে ঋণপত্রের মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ নেই। সরকার এর সুযোগ তৈরি করে দিলে সেখান থেকে অনায়াসেই পেঁয়াজ আমদানি সম্ভব হবে।

এসআই/এএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।