দোষী সাব্যস্ত মাদক সম্রাট এল চাপো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:১০ এএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মেক্সিকোর মাদক সম্রাট জোয়াকিন এল চাপো গুজম্যানের বিরুদ্ধে আনা ১০টি অভিযোগেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে নিউ ইয়র্কের একটি আদালত। কোকেন এবং হেরোইন সরবরাহসহ অর্থ পাচার এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের একাধিক অপরাধে অভিযুক্ত ছিলেন ৬১ বছর বয়সী গুজম্যান।

তার চূড়ান্ত সাজা এখনো ঘোষণা করা না হলেও ধারণা করা হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি পেতে পারেন তিনি। মেক্সিকোর একটি কারাগার থেকে সুরঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পাঁচ মাস পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তাকে আবারও গ্রেফতার করা হয়।

২০১৭ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীদের চক্র সিনায়োলা কার্টেলের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সময়ের সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক চোরাচালানের বৃহত্তম উৎসগুলোর একটি হয়ে ওঠে এই চক্র। সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে ফোর্বসের বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকার ৭০১ নম্বরে জায়গা হয় গুজম্যানের। সেসময় তার আনুমানিক মূল্য নির্ণয় করা হয়েছিল ১ বিলিয়ন ডলার।

রাষ্ট্রীয় কৌসুলিদের মতে যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী ঐ চক্র। এগারো সপ্তাহের বিচারিক কার্যক্রম শেষে ব্রুকলিনের একটি আদালত তাকে দোষী হিসেবে রায় দেন। গুজম্যানের সহযোগীদের অনেকেই তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

কে এই এল চাপো?
এল চাপো মানে বেঁটে- যিনি একসময় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন ছিলেন। মেক্সিকোর উত্তারঞ্চলের মাদক ব্যবসার চক্রের মূল হোতা এল চাপো।

যুক্তরাষ্ট্রে লাখ লাখ টন কোকেন পাচারে সহায়তাসহ হেরোইন, মেথ্যাম্ফেটামিন ও মারিজুয়ানা উৎপাদন ছাড়াও বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এছাড়াও ধারণা করা হয়, ভাড়াটে গুণ্ডা ব্যবহার করে শত শত হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার ঘটনার পেছনে ছিলেন তিনি। জড়িত ছিলেন বিরোধীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও অপহরণের মত ঘটনার সাথেও।

মেক্সিকোর মাদক চোরাচালানকারীর জীবনের বিস্ময়কর অনেক দিক প্রকাশিত হয়েছে আদালতে। অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীদের মাদক সেবন করিয়ে ধর্ষণ করতেন- আদালতের নথিতে এমন অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।

তার সাবেক সহযোগী কলম্বিয়ান মাদক পাচারকারী অ্যলেক্স সিফুয়েন্তের ভাষ্য অনুযায়ী, গুজম্যান বিশ্বাস করতেন কমবয়সী মেয়েদের সাথে যৌনতা তাকে জীবন দিতো। তাই তার সবচেয়ে কমবয়সী যৌনসঙ্গীকে তিনি 'ভিটামিন' নামে সম্বোধন করতেন। ওই নারীর বয়স মাত্র ১৩ বছর।

আদালতে সিফুয়েন্তে এমন অভিযোগও করেন যে গুজম্যান ২০১২ সালে মেক্সিকোর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়েতোকে ১০ কোটি ডলার দিয়েছিলেন।

গুজম্যানকে আটক করার জন্য চলা অভিযান থামানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১২ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর এল চাপোর কাছে ২৫ কোটি ডলার দাবি করেন বলেও উঠে আসে সিফুয়েন্তের জবানবন্দীতে।

তবে পেনা নিয়েতো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। আরেকজন সাক্ষী নিজে গুজম্যানকে অন্তত তিনটি খুন করতে দেখেছেন বলে বিবরণ দিয়েছেন।

গুজম্যানের সাবেক দেহরক্ষী ইসাইয়াস ভালদেজ রিওস জানান, বিপক্ষের মাদকচক্রে যোগ দেয়ার কারণে দু'জনকে নৃশংসভাবে নির্যাতনের পর মাথায় গুলি করে হত্যা করে গুজম্যান। এরপর তাদের মরদেহ আগুনে ছুড়ে ফেলার নির্দেশ দেন।

আরেকটি ঘটনায় আরলানো ফেলিক্স চক্রের এক সদস্যকে জীবন্ত মাটি চাপা দেয়ার আগে আগুনে পুড়িয়ে নির্যাতন করেছিলেন বলে জানা যায় রিওসের জবানীতে।

আরেক মাদক চক্রের প্রধানের ভাই তার সাথে হাত না মেলানোয় ওই ব্যক্তিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে গুজম্যানের বিরুদ্ধে।

২০১৫ সালে মেক্সিকোর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত আল্টিপ্লানো কারাগার থেকে গুজম্যানের পালানোর ঘটনার বিস্তারিতও উঠে আসে আদালতে। সেসময় তার ছেলেরা কারাগারের কাছে জায়গা কেনে এবং গুজম্যানের কাছে কারাগারে একটি জিপিএস ঘড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে যেন সুরঙ্গ খুঁড়ে সরাসরি তার কাছে যাওয়া সম্ভব হয়।

পরবর্তীতে বিশেষভাবে তৈরি মোটরসাইকেল চালিয়ে ওই সুরঙ্গ দিয়ে পালান এল চাপো। স্ত্রী এবং রক্ষিতাদের ওপর নজর রাখতে নিজের ফোনে স্পাই সফটওয়্যার ব্যবহার করতেন গুজম্যান। ওই সফটওয়্যারের কল্যাণে আদালতে তার পাঠানো অনেক মেসেজ প্রমাণ হিসেবে পেশ করতে সক্ষম হয় এফবিআই।

কেন গুরুত্ব পাচ্ছে এই বিচার?

যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত মেক্সিকোর ড্রাগ কার্টেলের যতজন প্রধানের বিচার হয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত গুজম্যান।মেক্সিকোতে মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত সহিংসতায়, যেগুলো মূলত মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের সাথে কার্টেলগুলোর এবং কার্টেলদের নিজেদের মধ্যে সংঘটিত হয়, গত এক দশকে এক লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

মেক্সিকোতে পুলিশের হেফাজত থেকে দু'বার পালিয়ে এবং অসংখ্যবার গ্রেফতার এড়িয়ে আলোচনায় আসেন গুজম্যান। তার নিজের এলাকার অনেকের দৃষ্টিতে গুজম্যান বীরোচিত এক ব্যক্তিত্ব। সেসব এলাকায় তাকে উৎসর্গ করে লোকগানও প্রচলিত আছে।

জেল থেকে পালানোর পর ২০১৬ সালে মেক্সিকোর এক জঙ্গলে থাকার সময় হলিউড অভিনেতা শন পেনকে একটি সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সেখানে নিজেকে বিশ্বের শীর্ষ হেরোইন, কোকেন, মেথ্যাম্ফেটামিন ও মারিজুয়ানা সরবরাহকারী বলে দাবি করেন।

কৌসুলিদের বক্তব্য অনুযায়ী, অতীতে গুজম্যান সাক্ষীদের ভয় দেখানো ও হত্যার সাথেও জড়িত ছিলেন। সেকারণে এই বিচারের জুরিদের নাম প্রকাশ করা হয়নি এবং তাদেরকে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীসহ ব্রুকলিনের আদালতে আনা-নেওয়া করা হতো।

টিটিএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।