আদালতে সত্য বলে দিল মেয়ে


প্রকাশিত: ১১:৩৩ এএম, ২৬ আগস্ট ২০১৫

মেয়েকে লুকিয়ে রেখে দুই ব্যক্তির নামে মানবপাচার মামলা করায় বাবা অলিয়ার রহমানের প্রকৃত ঘটনা আদালতকে জানিয়ে দিল মেয়ে আমেনা (২২)।

বুধবার সকালে তাকে ঠাকুরগাঁও আদালতে হাজির করা হলে বাবার সব চক্রান্ত ফাঁস করে দেন তিনি।

এর আগে বুধবার সকালে মুন্সিগঞ্জ জেলার খালিস্ট মোড় থেকে আমেনাকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও নিয়ে আসে সদর থানার পুলিশ।

এদিকে মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ঢাকার নুরে আলম ও পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম। ঘটনার শুরু পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পাঠান পাড়া থেকে।

এদিকে বুধবার সকালে আমেনাকে ঠাকুরগাঁও চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে ৬৪ ধারায় জবাববন্দিতে তিনি জানায়, তার বাবা অলিয়ার রহমান তাকে ঢাকায় নূরে আলম নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ দেন। কয়েক মাস কাজ করার পরে পরিবার আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য বোদায় নিয়ে আসে এবং বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পরেই আমার সংসার ভেঙে যায়। বাবা আবার আমাকে বুদ্ধি করে ঢাকায় নূরে আলমের বাড়িতে নিয়ে যায়।

যাওয়ার আগে বলেছিল কিছুদিন পর বাড়িতে কেউ না থাকলে বাসা থেকে বের হয়ে আসতে। ঠিক সেই মোতাবেক একদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে বাবাকে মোবাইল ফোনে জানাই। বাবা আমাকে পরে মুন্সিগঞ্জ খালিস্ট মোড় এলাকায় এক বাড়িতে যেতে বলে। এর পরে আমার বাবা অলিয়ার রহমান আমার বাসার মালিক নূরে আলম ও আমাদের গ্রামের বাসার প্রতিবেশি জাহাঙ্গীর আলমের নামে একটি মানবপাচার মামলা দায়ের করেন। পরর্তীতে ওই দুজনের কাছে আমার বাবা ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। আসলে কেউ আমাকে অপহরণ বা পাচার করেনি। আমার বাবাই এই ঘটনাটি সাজিয়েছে।

মামলার আসামি জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে অলিয়ার রহমানের মেয়েকে গৃহকর্মীর কাজে নিয়োগ দেয়। পরবর্তীতে ওই মেয়ে তার বাবা বাড়িতে নিয়ে এসে বিয়ে দেয়। এরপরে আমি আর কিছু জানি না। পরবর্তীতে শুনি ওই মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর আবার ঢাকায় পাঠিয়েছে তার বাবা। যাওয়ার কয়েকদিন পরে ওই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলে অলিয়ার রহমান আমার নামে ও নূরে আলমের নামে একটি মিথ্যা মানবপাচার মামলা করেন ঠাকুরগাঁও নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালে। এরপরে ওই মামলায় আমি দুইবার হাজতে যাই। আমরা এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য বিজ্ঞ আদালতের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

আর এক আসামি নূরে আলম জানান, মেয়েটি আমার বাসায় ভালোভাবেই কাজ করছিল। তার উপর আমার পরিবার নির্ভরশীল হয়েছিল। আমরা বাসায় কেউ না থাকায় একদিন হঠাৎ সে বাড়ির গার্ডকে সাবান কেনার কথা বলে বেড়িয়ে পড়ে। তারপর সে আর বাড়িতে ফেরত আসেনি। এ ঘটনায় ওই রাতে ঢাকার পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। তার পরের দিন একটি জাতীয় দৈনিকে নিখোঁজ সংবাদ প্রকাশ করি। কিন্তু মেয়ের বাবা হঠাৎ করে একটি মিথ্যা মানবপাচায় মামলা দায়ের করে ঠাকুরগাঁও নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালে। কয়েকদিন পরে মেয়ের বাবা আমার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। এর পর থেকেই মামলা ভয়ে আমি ঘর ছাড়া।

মামলার বাদী অলিয়ার রহমান ঘটনার কথা অস্বীকার করেছেন।

ঠাকুরগাঁও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জাগো নিউজকে জানান, মামলার আসামিদের তথ্যানুসারে পুলিশ মুন্সিগঞ্জ খালিস্ট মোড় এলাকা থেকে ওই মেয়েকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও থানায় নিয়ে আসে। এরপর মেয়েটি জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

রিপন/এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।