বাড়ি ফিরতে চান আইএসে যোগ দেয়া জার্মান নারী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২৮ পিএম, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

চার বছর আগে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দলে নাম লেখানোর জন্য নিজের দেশ, পরিবার সব কিছু ছেড়ে এসেছিলেন। জার্মানি থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন সূদূর সিরিয়ায়।

১৯ বছর বয়সী লিওনোরা এখন পূর্ব সিরিয়ার আইএসের শেষ দুর্গ বাঘোঝ থেকে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছেছেন।
এতদিন পর নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। সে কারণেই বাড়ি ফিরতে চাইছেন তিনি। এখানে এসেছিলেন একাই। কিন্তু এখন তার সঙ্গে তার দুই সন্তানও রয়েছে। শুধু লিওনোরাই নন, প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে কয়েক হাজার নারী, পুরুষ এবং শিশুকে ফেলে পালাচ্ছে জঙ্গিরা।

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইরাক সীমান্তের পূর্ব সিরিয়ায় আইএস ঘাঁটিতে চূড়ান্ত লড়াই চালাচ্ছে সিরিয়ান ডেমোক্রেট ফোর্সেস (এসডিএফ)। প্রাণরক্ষার তাগিদে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এলাকা ছাড়ছেন বহু মানুষ। লিওনোরা তাদেরই একজন। পরনে কালো লম্বা বোরখা, মাথায় হিজাব। অনর্গল ইংরেজিতে নিজের কথা জানিয়েছেন লিওনোরা।

তিনি বলেন, আমি যথেষ্ট গোয়াঁর ছিলাম। ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলাম ১৫ বছর বয়সে। তার দু’মাস পরেই পালিয়ে সিরিয়ায় চলে আসি। এখানে আসার তিনদিনের মধ্যে বিয়ে করেন মার্টিন লেম নামের এক জার্মান নাগরিককে। যিনি অনেক আগে থেকেই জঙ্গি কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। মার্টিন লেমের তৃতীয় স্ত্রী লিওনোরা। আগের পক্ষের দুই স্ত্রীকে নিয়ে সে আগেই সিরিয়ায় চলে এসেছিল। তার আগেই সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে খিলাফত ঘোষণা করেছে আইএস। দলে দলে তাদের অনুগামীরা সেখানে জড়ো হচ্ছে। মার্টিনও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না।

বিয়ের পর প্রথমে জঙ্গিগোষ্ঠীর দখলে থাকা এলাকার অঘোষিত রাজধানী রাক্কায় থাকতেন লিওনোরা। মূলত গৃহবধূ হিসাবেই ছিলেন সেখানে। রান্না করা, কাপড় কাচাই ছিল তার কাজ। প্রথমদিকে জীবন ছিল অনেক সহজ। কিন্তু জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পর থেকেই শুরু হল সমস্যা।

প্রত্যেক সপ্তাহে একটা করে শহর হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সপরিবারে বাসস্থান পাল্টাতে হচ্ছিল লিওনোরাদের। প্রচণ্ড চাপ বেড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পরিবার ছেড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় জঙ্গিরা।

লিওনোরা বলেন, খাবার নেই, পানি নেই। শত্রুপক্ষও এগিয়ে আসছে। আর মেয়েরা ফাঁকা শহরে বাচ্চাদের নিয়ে বসে আছে। কুর্দ কর্তৃপক্ষের হেফাজতে রয়েছেন এমন বহু জঙ্গির বিদেশি স্ত্রী। সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের কাছে তাদের ফেরত নেওয়ার আবেদন করেও কোনও ফল হয়নি।

সুযোগ বুঝে স্বামীর সঙ্গে বাচ্চাদের নিয়ে জঙ্গি সমর্থন ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন লিওনোরা। সঙ্গে মার্টিনের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীও রয়েছেন। মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষ মার্টিনকে আটক করে। আর নারী-শিশুদের ঠাঁই হয় বন্দী শিবিরে। তার দাবি, জঙ্গি দলে থাকলেও মূলত কম্পিউটার, মোবাইল সারানোর মতো টেকনিক্যাল কাজই করত মার্টিন। যদিও জার্মান সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিদেশি জঙ্গিদের মধ্যে ২৮ বছরের মার্টিন ছিল যথেষ্ট প্রভাবশালী।

একটি ব্রিটিশ নজরদারি সংস্থা বলছে, ডিসেম্বরের শুরু থেকে জঙ্গি কবলিত এলাকা থেকে অন্তত ৩৬ হাজার মানুষ পালিয়ে এসেছে। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ২শ জনকে জঙ্গি হিসাবে আটকও করা হয়েছে। শিগগিরই ইরাক সীমান্তের ওপার থেকেও বহু শিশু-নারী বন্দী শিবিরে আশ্রয় নেবে। কারণ, জঙ্গিরা সেখানেও কোণঠাসা।

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় খিলাফত এলাকায় চার বছর কাটানোর অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে লিওনোরা বলেন, আমি জার্মানিতে আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই। পুরনো জীবনে ফিরে যেতে চাই। এখন বুঝতে পারছি কত বড় ভুল হয়ে গেছে।

টিটিএন/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।