স্কুলে যাওয়ার অবিরাম লড়াই তাদের
কল্পনা করুন তো, আপনি প্রত্যেকদিন স্কুলে যাচ্ছেন ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিড়ে গলা পানিতে সাঁতার কেটে। সাঁতার কাটার সময় দুই হাত ওপরে তুলে রেখেছেন; আর সেই হাতে শক্ত করে ধরে রেখেছেন প্লাস্টিকের একটি থলে। যে থলেতে রয়েছে বই-খাতা ও স্কুলের পোশাক!
আর এসব কিছু ঘটছে সেই সময়; আপনি যখন শুধুমাত্র মাথাটুকু ভাসিয়ে পানির স্রোতের সঙ্গে লড়াই করে তীরে ভেড়ার চেষ্টা করছেন। ফিলিপাইনের কিছু শিশুর জন্য এটা প্রত্যেকদিনের রুটিন। কিন্তু তাদের এই কষ্ট লাঘবে এগিয়ে এসেছে দেশটির একটি দাতব্য সংস্থা। তারা ওই শিশুদের স্কুলে যাওয়ার কষ্ট দূর করার জন্য বেশ কিছু নৌকা সরবরাহ করেছে।
‘ইয়োলো বোট অব হোপ ফাউন্ডেশন’ নামের ওই সংস্থা কয়েকটি নৌকা শিশুদের দিয়েছে। সংস্থাটি ফিলিপাইনের অন্যান্য স্কুলের শিশুদেরও সহায়তা করছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের দারিদ্রপীড়িত মিন্দানাও দ্বীপের জামবোনগা শহরের উপকূলীয় এলাকার জেলে এবং সমদ্র চাষীদের প্রথমবারের মতো সহায়তা করেছিল হোপ ফাউন্ডেশন।
আরও পড়ুন : নাইকির জুতায় ফের ‘আল্লাহ’ লেখা
স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রত্যেকদিন ওই শিশুরা প্রায় এক কিলোমিটার পানিপথ পাড়ি দেয়। কিন্তু পানির স্রোত বেড়ে গেলে তখন তাদের সাঁতার কেটে স্কুলে যেতে হয়। দাতব্য ওই সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা জ্যা জ্যাবোনেতা বলেন, ‘শিশুরা ভালো সাঁতারু হলেও তাদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনিরাপদ। এছাড়া অনেক শিশু সাঁতার জানে না।’
অন্য কোনো বিকল্প না থাকায় সেখানকার নৌকাগুলো মাছ ধরার কাজে ব্যবহার হয়। বই এবং স্কুলের পোশাক যাতে ভিজে না যায় সেজন্য প্লাস্টিকের ব্যাগে বই ভরিয়ে দুই হাত মাথার ওপরে তুলে ধরে দীর্ঘ পানিপথ পেরিয়ে স্কুলে যায় শিশুরা।
জ্যাবোনেতা বলেন, ‘আমি শিশুদের এই অবস্থা সম্পর্কে জানতাম না। কিন্তু যখন আমি তাদের এই অবস্থা সম্পর্কে জানার পর হতবাক হয়েছিলাম এবং এ ব্যাপারে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম।’
আরও পড়ুন : বদমেজাজী শিশুর চিকিৎসায় গাঁজার বিস্কুট!
এই পোস্টের পর তার অনেক বন্ধু স্কুলের শিশুদের সহায়তার জন্য এগিয়ে আসেন এবং অনেকেই আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। বর্তমানে এই দাতব্য সংস্থাটি পুরো ফিলিপাইনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশটির সব স্কুলের শিক্ষার্থীদের বহনকারী হলুদ রঙয়ের বাসের ন্যায় শিশুদের জন্যও তারা হলুদ রঙয়ের নৌকা দিয়েছে।
ছোট একটি নৌকা কিনতে খরচ হয়েছে প্রায় ২০০ ডলার। এতে সারিবদ্ধভাবে বসে ছয় থেকে আটজন শিশু পানিপথ পাড়ি দিতে পারে। এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট বড় নৌকাগুলো অনেক সময় শিক্ষার্থীদের বাবা-মা, শিক্ষক অথবা সিনিয়র শিক্ষার্থীরা পরিচালনা করেন।
কয়েক বছর ধরে এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের শিক্ষার জন্য আরো বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। জ্যাবোনেতা বলেন, সমস্যা হচ্ছে এ ধরনের সম্প্রদায় যেসব সঙ্কটের মুখোমুখি হন সেগুলো একেকটা একেক রকমের।
আরও পড়ুন : ১০ মিনিট দেরি হওয়ায় স্ত্রীকে তিন তালাক
কিছু কিছু প্রকল্পে তারা শিশুদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করছেন। যেসব শিশু দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যায়, তারা স্কুলের পাশে সংস্থাটির আবাসিক ভবনে থাকতে পারবে। ২০১০ সালে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করেছে।
জ্যাবোনেতা বলেন, সচরাচর আমরা কোনো সম্প্রদায়ের নেতা অথবা স্থানীয় স্কুলের সঙ্গে কাজ করি। আর এসব কাজে অর্থ আসে স্থানীয়দের কাছ থেকেই; যারা পার্থক্য ঘুচানোর জন্য সাহায্য করতে চান। ফেসবুকের মাধ্যমেই তাদের এসব জনকল্যাণমূলক কাজের শুরু হয়েছিল।
দেশটিতে অনেকেই ইয়োলো বোট অব হোপ ফাউন্ডেশনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিবাচক কাজের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। প্রায় সাত হাজার দ্বীপের দেশ ফিলিপাইন। যে কারণে দেশটির সর্বত্রই নৌকা দেখা যায়। কিছু পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, ফিলিপাইনে প্রায় ১০ লাখ নৌকা রয়েছে।
সূত্র : বিবিসি।
এসআইএস/পিআর