নিজের ‘বোকামি’ থেকে ১২০ কোটি ডলারের ব্যবসার মালিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১২ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

ক্রিস্তো কারমান। টাকা পাঠানোর ব্যবসা ‘ট্রান্সফারওয়াইজ’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি। এখন কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী হিসেবে। যার বর্তমান আর্থিক মূল্য ১২০ কোটি ডলারেরও বেশি।

তবে নিজের ‘চরম বোকামি’র জন্য যখন তিনি পারলে নিজেকেই লাথি মারেন, তখন তিনি জানতেনই না যে তার এই বোকামি থেকেই জন্ম নিতে যাচ্ছে এমন এক ব্যবসা।

ব্যবসাটির আইডিয়া তার মাথায় আসে ২০০৮ সালে, যখন তিনি লন্ডনে ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন। এস্তোনিয়া থেকে আসা ক্রিস্তোর বয়স তখন ২৮ বছর। সেবার তিনি ক্রিস্টমাসের বোনাস পেলেন ১০ হাজার পাউন্ড।

এস্তোনিয়াতে সুদের হার তখন লন্ডন থেকে অনেক বেশি। তাই ক্রিস্তো ঠিক করলেন তিনি তার ইউকে চলতি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বোনাসের টাকাটা এস্তোনিয়ায় নিজের সঞ্চয়ী হিসাবে পাঠিয়ে দেবেন, ফলে অনেক বেশি টাকা তিনি সেখানে সুদ হিসেবে পাবেন।

cristo-2

ক্রিস্তো কারমান বলেন, ‘যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই করলাম। আমার ইউকে ব্যাংককে ১৫ পাউন্ড ফি দিয়ে ১০ হাজার ডলার পাঠিয়ে দিলাম। কিন্তু এক সপ্তাহ পরে দেখি আমার এস্তোনিয়ান অ্যাকাউন্টে আমার ধারণার চেয়ে ৫০০ পাউন্ডের সমপরিমাণ অর্থ কম জমা হয়েছে। খোঁজ নিতে শুরু করলাম ঠিক আসলে কী হয়েছে, আর সহজেই বুঝলাম কত বড় বেকুব আমি।’

তিনি বলেন, ‘আমি বোকার মতো আশা করছিলাম যে রয়টার্স ও ব্লুমবার্গে (বার্তা সংস্থা) যে মুদ্রা বিনিময় হার আমি দেখেছিলাম, আমার ইউকে ব্যাংক সেই হারই আমাকে টাকা দেবে। কিন্ত ব্যাংক আমার ক্ষেত্রে যে বিনিময় হার ব্যবহার করেছিল, তা ছিল ৫ শতাংশ কম। আমার ব্যাংক এবং অন্য সব ব্যাংকই তাই করে, তাদের ব্যবসার জন্য। এটা ছিল আমারই ভুল।’

নিজেকে নিয়ে বিরক্ত ক্রিস্তো অবশ্য তখনই পণ করে বসেন যে তিনি বিদেশে টাকা পাঠানোর এমন এক উপায় খুঁজে বের করবেন যেখানে ব্যাংকের কোনো হাতই থাকবে না।

শুরুতে এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি এবং তার এস্তোনিয়ার বন্ধু তাভেত হিনরিকাস। টেলিযোগাযোগ কোম্পানি স্কাইপের এই পরিচালকের সঙ্গে তিনি অনানুষ্ঠানিকভাবে টাকা-পয়সা লেনদেন করতেন।

এটা কাজ করছিল কারণ ক্রিস্তো প্রায়ই পাউন্ডের সঙ্গে তখনকার এস্তোনিয়ান মুদ্রা ক্রুন-এর বিনিময় করতেন। আর তাভেত করতেন উল্টোটা। তারা এক্ষেত্রে বেছে নিতেন দিনের গড় বিনিময় হার, অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট দিনে যেসব দামে একটি মুদ্রা বেচাকেনা হয়, তার গড় দাম।

cristo-3

কিছুদিনের মধ্যে তারা এস্তোনিয়ান বন্ধুদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। যারা এস্তোনিয়া এবং দেশের বাইরে থাকা বন্ধুদের একটি দল। তারা সবাই ঠিক একইভাবে মুদ্রা বিনিময় করা শুরু করেন। আর ঠিক তখনই ক্রিস্তো এবং তাভেত বুঝতে পারেন যে এটিকে একটি ব্যবসায় পরিণত করা যেতে পারে।

তাই ২০১১ সালে তারা লন্ডনে চালু করেন ‘ট্রান্সফারওয়াইজ’। এটি একটি আর্থিক প্রযুক্তি বা ‘ফিনটেক’ ওয়েবসাইট যা ব্যবহার করে যেকেউ দেশের বাইরে অন্য মুদ্রায় অর্থ পাঠাতে পারেন, আর এ ক্ষেত্রে বিনিময় হার হবে দিনের গড় বিনিময় হার এবং ফি হবে একেবারে নির্দিষ্ট। মাত্র শূন্য দশমিক পাঁচ (০.৫) শতাংশ।

‘ট্রান্সফারওয়াইজ’ আজ দুনিয়াজুড়ে ব্যবসা করছে। আর এতে বিনিয়োগ করেছেন ভার্জিনের মালিক স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন এবং পেপ্যালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ম্যাক্স লেভচিন।

প্রথম বছরে ক্রিস্তো এবং তাভেত ব্যবসার পেছেনে নিজেদের জমানো টাকা ঢেলেছেন। শুরুর দিকে একজন-দুজন করে কাস্টমার পেয়েছেন তারা। এর-ওর কাছ থেকে শুনে গ্রাহকরা এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করতেন। কিন্তু পরে একটি প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইটে ইতিবাচক রিভিউর পর গ্রাহক সংখ্যা হু হু করে বাড়তে শুরু করে।

cristo-4

আইনগত ঝামেলা এড়াতে ওয়েবসাইট শুরুর আগেই ক্রিস্তো ও তাভেত ব্রিটেনের তৎকালীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস অথোরিটির কাছ থেকে অনুমতি এবং লাইসেন্স নিয়ে নেন।

২০১২ সালে তারা বিনিয়োগকারী খুঁজতে শুরু করেন, কিন্তু প্রথমে কেউ এগিয়ে আসতে চায়নি। তবে ‘ট্রান্সফারওয়াইজ’ ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগ পেয়েছে ৩০.৫ কোটি ডলার। চল্লিশ লাখ মানুষ এখন এই অ্যাপ ব্যবহার করেন, আর ৫০টি দেশের ৪৯টি মুদ্রার বিনিময়ে এটি ব্যবহার করা হয়।

কোম্পানিটি বলছে, প্রতি মাসে ‘ট্রান্সফারওয়াইজ’ ব্যবহার করে ৩০০ কোটি পাউন্ড বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। এর বার্ষিক লাভের পরিমাণ ৬২ লক্ষ পাউন্ড। আর কর্মীর সংখ্যা ১,৪০০। প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় বৃহত্তম অফিস এস্তোনিয়ার রাজধানী তালিনে।

সূত্র : বিবিসি

এমবিআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।