চীনের সঙ্গে যৌথ রেল প্রকল্প বাতিল করল মালয়েশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:০৬ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

চীনের অর্থায়নে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেল প্রকল্প বাতিল করল মালয়েশিয়া। প্রকল্পের খরচ মাত্রাতিরিক্ত বেশি হওয়ায় চীন-মালয়েশিয়া যৌথ প্রকল্প ইস্ট কোস্ট রেল লিঙ্ক থেকে কুয়ালালামপুর বেরিয়ে গেল বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।

যৌথ এই প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ছিল ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মালয়েশিয়া এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় নিশ্চিত ভাবেই ধাক্কা খেল চীন। কারণ, ইস্ট কোস্ট রেল লিঙ্ক চীনের গুরুত্বপূর্ণ বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

শনিবার মালয়েশিয়ার অর্থমন্ত্রী আজমিন আলি এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। প্রকল্পের খরচ অত্যন্ত বেশি হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত সুদের কারণেই মালয়েশিয়া এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘দেশের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে মধ্যে সংযোগ স্থাপনে এই রেলপথ নির্মাণে যা খরচ হবে, তা দেয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমাদের নেই। এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে না গেলে শুধু সুদ হিসেবেই প্রতি বছর চীনকে ৫০০ মিলিয়ন রিঙ্গিত দিতে হবে। তাই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চীনা অর্থায়নে এই রেললাইন তৈরি হচ্ছে বলে সুদ হিসেবে এই বিপুল পরিমাণ টাকা বেইজিংকে দিতে বাধ্য কুয়ালালামপুর। সেই ঋণের জাল থেকে মুক্তি পেতেই চীনকে না বলেছে তারা।

বর্তমানে আর্থিক সংকাটে আছে মালয়েশিয়া। দেশটির সামগ্রিক ঋণের বোঝা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ কোটি টাকা। তাই বাধ্য হয়েই একের পর এক প্রকল্প বাতিল করছে মালয়েশিয়া সরকার। তবে ইস্ট কোস্ট রেল লিঙ্ক থেকে বেরিয়ে যাওয়া তার মধ্যে অন্যতম। কারণ শুধুই আর্থিক বা পরিকাঠামোগত বা বাণিজ্যিক নয়, এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল চীন। তাই বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে অন্তর্দেশীয় কূটনীতিও।

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সঙ্গে চীনের ছিল দহরম মহরম। সেই সম্পর্কের সুযোগ নিয়েই মালয়েশিয়ার সঙ্গে একের পর এক যৌথ প্রকল্প শুরু করে চীন। প্রতিটি প্রকল্পের পেছনেই ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতি আর চড়া হারে সুদ আরোপ করার অভিযোগ উঠেছিল মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে। এমন অভিযোগও উঠেছিল যে নিজের পাহাড় প্রমাণ আর্থিক তহবিল তছরুপের বিষয়টিতে ধামাচাপা দিতেই চীন থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন নাজিব। সেই অভিযোগের জেরেই টানা ন’বছর ক্ষমতায় থাকায় পর গত বছরের মে মাসে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে পরাজিত হন নাজিব রাজাক আর ক্ষমতায় ফেরেন মাহাথির মোহাম্মদ।

ক্ষমতায় এসেই আর্থিক দুর্নীতি আর পাহাড় প্রমাণ ঋণের উৎস খুঁজতে চীন-মালয়েশিয়া যৌথ প্রকল্পগুলোর দিকে বিশেষ নজর দেন মাহাথির মোহাম্মদ। আর তখনই বেরিয়ে আসে এই সব চুক্তিতে ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতির হদিশ।

সম্প্রতি হতাশ হয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ‘চীনকে আমরাই প্রকল্পের বরাত দিচ্ছি, আমরাই চীনের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছি, প্রকল্পের সমস্ত কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ চীন থেকে আমদানি করা হচ্ছে। শ্রমিকও নিয়ে আসা হচ্ছে চীন থেকে। আবার এই প্রকল্প থেকে বাণিজ্যিক সুবিধাও পাবে চীন। আমি এই ধরনের এক পেশে চুক্তিতে বিশ্বাসী নই।’

যদিও এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য মালয়েশিয়ার কাছে বিপুল পরিমাণ আর্থিক জরিমানা দাবি করতে পারে চীন। সেই জরিমানা কত হতে পারে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার।

চীনা ঋণের বোঝা থেকে বাঁচতে মালয়েশিয়া বেরিয়ে গেলেও এই ঘটনায় বড়সড় ধাক্কা খেল চীন। কারণ, এই প্রকল্প ছিল তাদের স্বপ্নের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের অংশ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এশিয়া-আফ্রিকা-ইউরোপ, এই তিনটি মহাদেশকে রেল, সড়ক, বিমান ও সমুদ্রপথে যুক্ত করে দেয়াই ছিল চীনের মূল পরিকল্পনা। যার বাণিজ্যিক সুফল নিশ্চিত ভাবেই পাবে চীন।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

এসএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।