মাদুরোবিরোধী বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘হ্যাঁ’, চীন-রাশিয়ার ‘না’
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ থেকে ভেনিজুয়েলার মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রকাশের প্রচেষ্টা প্রতিহত করেছে চীন ও রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে দেয়া বিবৃতির খসড়ায় ‘ভেনিজুয়েলার পার্লামেন্টকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত দেশটির একমাত্র প্রতিনিধি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শনিবার রাতে রাশিয়া এবং চীনের ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের কারণে বিবৃতিটি পাস হয়নি। খবর পার্সট্যুডের
খবরে বলা হয়, নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাধর দেশ চীন ও রাশিয়া ছাড়াও অপর দুই অস্থায়ী সদস্যদেশ দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইকোটোরিয়াল গিনি এই খসড়া বিবৃতির বিরোধিতা করে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা ঝা শু বলেছেন, ‘তার দেশ অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘যে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে দায়ী করে আমি আশা করব সে নিজে একই কাজ করবে না।’
বিরোধিতা করে রাশিয়াও। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, যারা ভেনিজুয়েলাকে একটি রক্তের সাগরের দিকে ধাবিত করার চেষ্টা করছেন আমরা তাদের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ভেনিজুয়েলার জনগণ চায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছে তা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়।’
গত ২৪ জানুয়ারি বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইডো নিজেকে ভেনিজুয়েলার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করার পর যুক্তরাষ্ট্র তাকে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ট্রাম্প বলেন, ‘ভেনেজুয়েলার জনগণ মাদুরোর বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা আইনের শাসন ও স্বাধীনতা দাবি করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র আরও জানায়, মাদুরো যদি বিরোধী দলের ঘোষণা বাতিলের চেষ্টা করেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।
এর জের ধরে প্রেসিডেন্ট মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং তার দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব কূটনীতিককে দেশে ফেরার জন্য ৭২ ঘন্টার সময়সীমা বেধে দেন। মাদুরো বলেন, ‘ভেনেজুয়েলা ছাড়ো। আমাদের আত্মমর্যাদা রয়েছে।’ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর তাদের কর্মীদের ভেনেজুয়েলা ছাড়ার নির্দেশ পাঠিয়েছে ইতোমধ্যে।
মাদুরোর প্রতি সমর্থন দেয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অনেকটা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা মাদুরোর বিরুদ্ধে চাপ অব্যাহত রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে বিদেশি শক্তিগুলো গুয়াইদোকে সমর্থন দেয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। এটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে রাশিয়া।
১৪ সদস্যবিশিষ্ট লিমা গ্রুপের ১১ সদস্যদেশ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কানাডা, চিলি, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, পানামা, প্যারাগুয়ে ও পেরু যৌথ বিবৃতিতে গুয়াইদোকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমর্থন দিয়েছে।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গুয়াইদোকে সরাসরি সমর্থন দেয়নি। তবে স্বাধীন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। আর মাদুরোকে সমর্থন দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ইরান, মেক্সিকো, তুরস্কসহ বিশ্বের অন্তত ১০টি দেশ।
ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে মাদুরো ক্ষমতায় আসেন। তিনি রাশিয়ার মিত্র। কারাকাসভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা দ্য অবজারভেটরি অব সোশ্যাল কনফ্লিক্ট জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলায় এই সপ্তাহে চলা বিক্ষোভে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছেন।
এসআর/এমএস