অস্ট্রেলিয়ায় ৫ জন নারীর একজন যৌন সহিংসতার শিকার
অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি তিনজন নারীর একজন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন এবং যৌন সহিংসতার শিকার হন প্রতি পাঁচজনে অন্তত একজন। দেশটির আদিবাসীদের ক্ষেত্রে এ ধরণের সহিংসতার হার আরও অনেক বেশি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি দশজন আদিবাসী নারীর একজন সহিংসতার শিকার হন অপরিচিত কারও দ্বারা। আর পারিবারিক সহিংসতা দেশটিতে প্রায় নিয়মিত ঘটনা এবং গড়ে প্রতি সপ্তাহে একজন নারী খুন হন তাদের বর্তমান বা সাবেক পুরুষ সঙ্গীর হাতে।
নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার সর্বোচ্চ রূপ হলো খুন। কিন্তু এটিই নিয়মিত হচ্ছে সেখানে। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল ওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ রুথ ফিলিপস বলেন, নারীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ঘরেই বেশি আহত হচ্ছেন। তার মতে, এটি একটি মারাত্মক সমস্যা।
দেশটিতে আলোচিত কিছু খুনের ঘটনা বিষয়টিকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচনায় নিয়ে এসেছে। মেলবোর্নের একটি এলাকায় কমেডিয়ান ইউরাইডাইস ডিক্সনের হত্যার ঘটনায় বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। এর কয়েক মাসের মাথায় অর্থাৎ গত বছরের অক্টোবরেই অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় প্রাণ হারিয়েছেন ১১ নারী।
মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পারিবারিক সহিংসতা বিষয়ক গবেষক কেলসলি হেগার্টি বলেন, অনেক সময় নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা একটির পর একটি ঘটতেই থাকে এবং বাস্তবতা হলো গোপন মহামারীর মতো রয়েছে হয়রানি ও সহিংসতার বিষয়গুলো।
এর আগে ২০১২ সালে আইরিশ নারী জিল মিয়াগের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। এখন আবার সেই একই প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে আয়া মাসারভির মৃত্যুর ঘটনায়। তিনি মেলবোর্নে হেঁটে নিজের বাড়িতে যাচ্ছিলেন।
একুশ বছর বয়সী ইসরায়েলি আরব এই তরুণীর মৃত্যুর ঘটনা ব্যাপক ক্ষোভ ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়, বিশেষ করে নারী বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়ে।
নিহত এই তরুণীর পরিবার বলছে, অস্ট্রেলিয়াকে সব সময় নিরাপদ মনে করতেন মাসারভি এবং সে কারণেই তিনি এখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পড়ার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। তবে তার আগেও আরও কয়েকটি হত্যার ঘটনা নিয়েও বিতর্ক হয়েছে। জি-২০ জাতিসমূহের মধ্যে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান অষ্টম।
২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার সরকার নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা কমিয়ে আনতে একটি নীতি প্রণয়ন করে। তারপরেও গবেষক ফিলিপ ও অন্যরা বলছেন যে, পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। বিশেষজ্ঞরা তাই বিষয়টির ওপর আরও জোর দেয়ার দাবি করছেন।
দেশটি যৌন বৈষম্য বিষয়ক কমিশনার কেট জেনকিনস বলেছেন, আমরা সহিংসতা কমিয়ে আনতে পারব তখনই যখন নারীরা শুধু নিরাপদই বোধ করবেন না বরং তারা একই সাথে সম্মানও পাবেন।
টিটিএন/এমকেএইচ