দুই কারণে ইউরোপে কমছে পাখি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫৪ এএম, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

জার্মানিসহ ইউরোপজুড়ে উদ্বেগজনক হারে কমছে পাখি। জার্মান সরকারের এক প্রতিবেদনে পাখির আবাসস্থল হারিয়ে যাওয়া এবং পোকামাকড় কমে যাওয়াকে এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৩ দশকে জার্মানিসহ ইউরোপজুড়েই পাখির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়।

জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিগত শতাব্দীর ৯০ দশকের শেষের দিকে জার্মানিতে সব পাখি প্রজাতির এক তৃতীয়াংশ বিলুপ্ত হয়েছে। বিশেষ করে কৃষি অঞ্চলের পাখি। সমগ্র ইউরোপের কৃষিভূমিতে থাকা ৩০ কোটি প্রজনন উপযোগী পাখি ১৯৮০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে হারিয়ে গেছে।

এরমধ্যে ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ল্যাপউইংস বা টিট্টির জাতীয় পাখির সংখ্যা কমেছে ৮০ শতাংশ। আর ১৯৯০ থেকে ২০১৫, অর্থাৎ ২৫ বছরে পার্ট্রিজ বা তিতির কমেছে ৮৪ শতাংশ।

একই সময়ে উইনচ্যাট নামে ফ্যাকাশে গলার ছোট একটি পরিযায়ী পাখি ৬১ ভাগ এবং ইউরেশিয়ান স্কাইলার্ক বা ভরতপাখি কমেছে ৩৫ শতাংশ।

জার্মান কনসারভেশন অর্গানাইজেশন এনএবিইউয়ের পাখি সংরক্ষণ কর্মকর্তা লার্স লাচম্যান ডয়েচে ভেলেকে বলেন, এক সময় জার্মানির সর্বত্রই স্কাইলার্ক দেখা যেত। কিন্তু এখন দেশের বহু এলাকায় দিনের যে কোনো সময়ে এই পাখির গান শোনা বেশ বিরলই হয়ে গেছে।

bird2

বাসস্থল ও পোকার বিলুপ্তি : এনএবিইউয়ের তথ্য মতে, কৃষি ঘনীভূতকরণই পাখি কমে যাওয়ার মূল কারণ। বড় ও কার্যকরী মেশিনের মাধ্যমে বিশাল মাঠ এবং এক ফসলি চাষ সম্ভব হয়েছে, পাশাপাশি কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার কীট ও পোকার মতো পাখি-খাদ্য এবং পাখির বাসা ও প্রজনন স্থান কমিয়েছে।

কীটনাশক ও আগাছা নষ্টকারী উপকরণ ব্যবহারের ফলে কিছু কিছু প্রজাতির পোকার সংখ্যা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে বলে জার্মান সরকার জানিয়েছে।

কৃষির এক ফসলী চাষ ও কীটনাশকের ব্যবহার বিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেয়ায় গ্রিন পার্টি জার্মান সরকারকে অভিযুক্ত করেছে।

লাচম্যান বলেন, পাখিরা যাতে উপকৃত হয়, এমন পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে কৃষি নীতির পরিবর্তন আনার বিষয়টি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর নির্ভর করে।

তার মতে, কৃষি ভূমির ১০ শতাংশ বাস্তুগত অগ্রাধিকারে রাখলে ইতিবাচক ফল আসতে পারে। তার মানে এটা নয় যে, সেখানে আপনি কিছু উৎপাদন করতে পারবেন না। বরং পরিবেশ উপযোগী পদ্ধতিতে তা করা যাবে। যেমন, ফল উৎপাদন করা যেতে পারে, যা পাখির জন্য ভালো।

তিনি বলেন, এভাবে কৃষিক্ষেত্রে পাখি হ্রাসের ধারাকে পাল্টে দেয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে কৃষির শিল্প মডেলকে অরগ্যানিক কৃষির মাধ্যমে স্থলাভিষিক্ত করা-আরেকটা উপায় হতে পারে।

লাচম্যান বলেন, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির পাখির সংখ্যা বাড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কনজার্ভেশন আইন সহায়তা করতে পারে। এনএবিইউ, বার্ডলাইফ ইউরোপসহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংস্থার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২ লাখ ৬০ হাজার নাগরিক ২০২০ সালে নবায়ন হতে যাওয়া ইইউয়ের সাধারণ কৃষি নীতির নতুন কাঠামোয় বাস্তুগত বৈচিত্র্যের সংযুক্তি চেয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাখির অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এটাই প্রথম নয়। যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- পাফিন, কারলিউ, নাইটিঙ্গেল ব্যাপকহারে কমেছে। ১৯৭০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ৬৪ শতাংশ কারলিউ হ্রাস পেয়েছে। আর এ সবই হয়েছে আবাসস্থল হারিয়ে ফেলার ফলে।

২০১৫ সালের দু'টি প্রতিবেদনে বরা হয়েছে, জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাখি প্রজাতির প্রায় এক তৃতীয়াংশ হয়ত হুমকির মুখে বা বিলুপ্তির মুখে। ২০১৪ সালের অন্য এক সমীক্ষায় দেখা যায়, চড়াইপাখি এবং স্টারলিং বা শালিকের মতো প্রজাতির পাখি ইউরোপজুড়েই উদ্বেগজনক হারে কমছে।

এমএমজেড/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।