তিস্তা শুকিয়ে যাওয়ার পেছনে দায় নেই : সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:২৯ এএম, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

বলা হয়ে থাকে তিস্তা নদী হলো বাংলাদেশের উত্তরের জীবনরেখা। পরোক্ষভাবে হোক আর প্রত্যক্ষভাবে হোক এই তিস্তাই উত্তরের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে। তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত আলোচনা অনেক পুরোনো, এ নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কে এই মুহুর্তে অস্বস্তির কেন্দ্রে থাকা এই তিস্তা নদী ক্রমশ শুকিয়ে যাওয়ার পেছনে তাদের কোনো ভূমিকা নেই বলে বিবিসির কাছে দাবি করেছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন কুমার চামলিং।

তিস্তা নদীর উৎপত্তি ভারতের পার্বত্য অঙ্গরাজ্য সিকিমেই, আর সিকিম তিস্তার ওপর একের পর এক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার ফলেই এই নদীর প্রবাহ ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে বলে বহু পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানী মনে করে থাকেন।

অন্যদিকে ‘তিস্তাতে একেবারেই জল নেই’ এই যুক্তি দেখিয়েই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে প্রস্তাবিত তিস্তা চুক্তির বিরোধিতা করে আসছেন।

তিনি আরও দাবি করেছেন, সিকিম এতটাই দায়িত্বশীলভাবে তিস্তার ওপর বিভিন্ন জলাধার ও বাঁধ নির্মাণ করেছে যে তাতে গোটা রাজ্যের মাত্র সাতটি পরিবারকে আশ্রয়চ্যুত হতে হয়েছে। তিস্তার ভাটিতে যেসব অঞ্চল রয়েছে (অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ) তাদের উদ্বেগের প্রতিও সিকিম সব সময় খেয়াল রেখে চলছে বলে মুখ্যমন্ত্রী চামলিং ওই সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন।

অবশ্য তিস্তা চুক্তি নিয়ে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন, কারণ একটি ‘আন্তর্জাতিক বিষয়’ নিয়ে ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

তবে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী যা-ই বলুন, বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করছেন ওই রাজ্যের অসংখ্য জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে তিস্তার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে।

তিস্তার প্রবাহ পর্যালোচনার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে কমিশন গঠন করেছিল, তার প্রধান ও নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলছেন, ‘এই প্রকল্পগুলোর জন্যই তিস্তায় ‘লঙ্গিচিউডিনাল ডিসকানেক্টিভিটি’ তৈরি হয়েছে- সোজা কথায় নদীটা জায়গায় জায়গায় একেবারে শুকিয়ে গেছে!

রুদ্র আরও বলেছেন, ‘নদী মানেই কিন্তু শুধু জলের প্রবাহ নয়, তার সঙ্গে সেডিমেন্ট লোড থাকে। যখনই সেই নদী আটকে আপনি হাইডেল পাওয়ার প্রজেক্ট গড়বেন, নদী প্রথমেই সেই সেডিমেন্ট লোডটা সেখানে ফেলে দেবে। তারপর কনডুইটের মধ্যে নিয়ে গিয়ে টার্বাইনে ঘোরানোর পর যে জলটা আবার নিচে মেশানো হবে, ততক্ষণে তার অনেক গুণগত পরিবর্তন হয়ে গেছে - ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারগুলো বদলে গেছে। বায়োডাইভার্সিটিরও প্রচুর ক্ষতি হবে,কারণ নদীর প্রবাহে যে সব প্রাণ বেঁচে থাকে, তারা কখনও স্থির জলে বাঁচতে পারে না।’

কিন্তু সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী চামলিং বলেছেন, ‘আমরা যেভাবে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বানিয়েছি তাতে নদীর পরিবেশ বা বাস্তুতন্ত্রের কোনো ক্ষতি হয়নি বললেই চলে।’

মোট ৩১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য তিস্তার, তার সিকিম অংশে ‘মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যায়’ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

সূত্র : বিবিসি বাংলা।

এনএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।