মেলেনি সহায়তা, সাইকেলে করে মায়ের দেহ সৎকারে নিয়ে গেল ছেলে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৩৯ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

পেশায় কৃষক। হাতে সেভাবে টাকা নেই। এরই মাঝে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লেন স্ত্রী। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সংসারে অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করার টাকা ছিল না তার। তাই বাধ্য হয়ে মৃত স্ত্রীর কাপড় বাঁধা দেহ কাঁধে নিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা হাঁটলেন তিনি। পেছনে কাঁদতে কাঁদতে হাঁটতে দেখা যায় তার মেয়েকে।

এই ভিডিও বিদ্যুতের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এই ঘটনা জায়গা করে নেয় সংবাদের শিরোনামে। উল্লেখ্য, দুই বছর আগে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে স্ত্রীর মরদেহ কাঁধে নিয়ে ১০ কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন ভারতের দারিদ্র্যপীড়িত প্রদেশ ওড়িশার কৃষক দানা মাঝি; ওই সময় তার ১২ বছর বয়সী কন্যা কান্না করতে করতে তার পেছনে হাঁটে।

বাড়ি থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন স্ত্রীকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর কোনো যানবাহন না পেয়ে স্ত্রীর মরদেহ কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন সেই দানা মাঝি।

দানা মাঝির সেই ঘটনার পর দুই বছর কাটতে না কাটতেই আবারও ওড়িশায় একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ওই কৃষকের পর এবার এক কিশোর সাইকেলে করে মায়ের দেহ নিয়ে গেল শ্মশানে। ওড়িশার সুন্দরগড়ের বাসিন্দা সরোজ। সাত বছর বয়সে বাবা মারা যায় তার। এরপর থেকে মা জানকী সিংহানিয়াই সংসার চালাতেন।

বাড়ির কাজ থেকে ছেলের দায়িত্ব সবই একা হাতে সামলাতেন লড়াকু এই নারী। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির কুয়ো থেকে পানি তুলছিলেন তিনি। সেই সময় আচমকাই পড়ে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন তিনি। মুহূর্তের মধ্যে মারা যান জানকী। মা ছাড়া আর কেউই ছিল না সরোজের।

মা মারা যাওয়ার পর দিশেহারা হয়ে পড়ে সে। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে কঠিন এই সময়ে সে পাশে পায়নি প্রতিবেশীদের। কারণ সে ‘নিচু’ জাতের। তাই শ্মশানযাত্রী হিসেবে সরোজকে সঙ্গ দেননি প্রতিবেশিদের কেউই।

কেউ সঙ্গ না দিলেও, মায়ের সৎকার তো আর ফেলে রাখা যাবে না। তাই বাধ্য হয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত কাপড় দিয়ে মায়ের দেহ মুড়ে ফেলে সরোজ।

সাইকেলে চাপিয়ে নেয় মায়ের দেহ। গন্তব্য চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরের জঙ্গল। রাস্তায় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হয় তার। কৌতূহলীদের নানা প্রশ্নেরও মুখোমুখি হতে হয় সরোজকে। ভেজা চোখেই এই দেহ মায়ের বলে জানায় সে।

জঙ্গলে গিয়ে মায়ের দেহ সৎকার করে সরোজ। ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে আদৌ কী এগোতে পেরেছে ভারত, ওড়িশার এই ঘটনার পর আরও একবার মাথাচাড়া দিয়েছে সেই প্রশ্ন।

এসআইএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।