হ্যাকিংয়ের কবলে ৯/১১ এর গোপন নথি
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে নাইন ইলেভেন হিসেবে পরিচিত সন্ত্রাসী হামলার গোপন নথি চুরি হয়ে গেছে। একাধিক বীমা ও আইনি সংস্থার সাইট থেকে মোট ১৮ হাজার গোপন নথি চুরি করেছে হ্যাকাররা। গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে ‘দ্য ডার্ক ওভারলর্ড’ নামের একটি সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এর বিনিময়ে মোটা টাকা দাবি করেছে হ্যাকাররা।
এদিকে হ্যাকারদের এমন দাবির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্তে শুরু করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। তবে একজন হ্যাকারই গোটা ঘটনা ঘটিয়েছে, নাকি একাধিক ব্যক্তি এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, তা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
চুরি করা তথ্য ও নথি শেয়ারের ওয়েবসাইট পেস্টবিনে ১৮ হাজার নথি চুরির কথা ঘোষণা করে তারা। তাতে ‘হিসকক্স’, ‘লয়েডস অব লন্ডন’-এর মতো বেশ কিছু বীমা সংস্থা এবং আইনি সংস্থা ‘হাস্ক ব্ল্যাকওয়েল’-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে ২০০১ সালে ওই সন্ত্রাসী হামলার আগে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের মালিকানা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা নিউইয়র্কের রিয়েল এস্টেট সংস্থা ‘সিলভারস্টাইন প্রপার্টিজ’এর কাছ থেকেও থেকেও গুরুত্বপূর্ণ নথি হাতিয়ে নিয়েছে ‘দ্য ডার্ক ওভারলর্ড।’
তাদের দাবি ৯/১১ হামলা নিয়ে গোপনীয়তা রক্ষার চুক্তি আদানপ্রদান হয়েছিল ওই সংস্থাগুলির মধ্যে। তাদের ই-মেল হ্যাক করে সেসব নথিপত্র হাতে চলে এসেছে দ্য ডার্ক ওভারলর্ডের। তারা দাবিকৃত অর্থ না দিলে এসব নথির গোপন তথ্য প্রকাশ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। সেই সঙ্গে তারা শর্ত দিয়েছে নগদে নয়, পুরো অর্থ ক্রিপটোকারেন্সি বিটকয়েনে দিতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবক’টি প্রদেশ-সহ আইসিস এবং আলকায়দার মতো জঙ্গি সংগঠনকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে তারা। মোটা টাকা পেলে যে কাউকেই সব নথি বিক্রি করে দেবে। তাদের ঘোষণার পর বুধবার বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে চুরি যাওয়া নথিপত্রের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। যাতে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নিয়ে কথোপকথন সামনে আসে। তবে তা থেকে গোপন চুক্তির ব্যাপারে সবিস্তারে কিছু জানা যায়নি।
ওদিকে নথিপত্র হ্যাকের খবর নিশ্চিত করেছে ‘হিসকক্স’। সংস্থার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘আমাদের আইনি পরামর্শ দেয় একটি সংস্থা। ৯/১১ হামলা সংক্রান্ত মামলা-মকদ্দমার দায়িত্বে ছিল ওরা। গত এপ্রিল মাসেই ওদের প্রযুক্তি হ্যাক হয়ে গিয়েছে বলে জানতে পারি আমরা। তবে পরিকাঠামোগতভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত নই আমরা। তাই সরাসরি আমাদের থেকে কিছু হাতিয়ে নিতে পারেনি হ্যাকাররা।’ এর পাশপাশি মার্কিন ও ব্রিটিশ প্রশাসনের সঙ্গে গোটা ঘটনার তদন্তে অংশ নেবে বলেও নিশ্চিত করেছে ‘হিসকক্স’।
এদিকে হিসকক্স নথি চুরি যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও অস্বীকার করেছে ‘হাস্ক ব্ল্যাকওয়েল’ সংস্থা। আর এখনও পর্যন্ত সেরকম কিছু চোখে পড়েনি বলে দাবি করেছে ‘লয়েডস অব লন্ডন’।
উল্লেখ্য ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ওসামা বিন লাদেনের নির্দেশে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিমান হামলা চালায় আলকায়দা জঙ্গিরা। ওই ঘটনায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। যার পুরোটাই বিভিন্ন বীমা সংস্থার বহন করার কথা। তবে তাদের কেউই ওই বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির দায় নিতে রাজি হয়নি। এ নিয়ে এখনও চলছে মামলা।
এমএমেজেড/এমএস