স্কুলে ইয়েস স্যারের বদলে ‘জয় হিন্দ’ আর ‘জয় ভারত’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৫৯ পিএম, ০১ জানুয়ারি ২০১৯

ভারতের গুজরাট প্রদেশের আহমেদাবাদ শহরের পরিমল বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্র পাঞ্চাল হর্ষ। প্রত্যেকদিনের মতোই শিক্ষক ক্লাসে এসে রোল কল করছিলেন। এতদিন নাম ডাকলেই ‘ইয়েস স্যার’ কিংবা ‘প্রেজেন্ট প্লিজ’ বলাটাই রীতি ছিল। কিন্তু নতুন বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি থেকে পাঞ্চালের নাম ডাকার সঙ্গে সঙ্গেই সে উঠে দাঁড়িয়ে হাত মুঠো করে বলল, ‘জয় হিন্দ’, ‘জয় ভারত’।

এভাবেই স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিজের উপস্থিতি জানান দিতে হচ্ছে মঙ্গলবার থেকে; নতুন এই নির্দেশ জারি করেছে গুজরাটের শিক্ষা দফতর।

পরিমল বিদ্যালয়ের শিক্ষক কমলেশ প্যাটেল বলেন, ‘আমাদের স্কুলেও নির্দেশ এসেছে যে ছাত্রছাত্রীরা রোল কলের সময়ে এখন থেকে ইয়েস স্যার বা প্রেজেন্ট প্লিজ না বলে জয় হিন্দ, জয় ভারত বলবে। আমরা ছাত্রদের বুঝিয়েছি যে কেন জয় হিন্দ, জয় ভারত বলাটা উচিত।

তার কথায়, নিজের দেশের প্রতি, নিহত সৈনিকদের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্যই যে উপস্থিতির সময়ে জয় হিন্দ জয় ভারত বলা উচিত, সেটা ছাত্রদের আজকেও বুঝিয়েছি আমি। দেশের প্রতি ভক্তি নিঃসন্দেহে বাড়বে এই নিয়মের ফলে।

সরকারি নির্দেশেও বলা হয়েছে, ছাত্রদের মধ্যে দেশ ভক্তির ভাবনা দৃঢ় করতেই ‘জয় হিন্দ’, ‘জয় ভারত’ বলার নিয়ম চালু করা হচ্ছে।

গুজরাটের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের নির্দেশক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের জারি করা ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, সব সরকারি, বেসরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে ১ জানুয়ারি থেকে এই নিয়ম চালু করতে হবে।

কারণ হিসেবে বলা হয়, কম বয়স থেকেই তাদের মনে দেশভক্তির চেতনা প্রসারিত করা যায়। হিন্দু পুনরুত্থানবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ, এবিভিপির রাজস্থানের এক শিক্ষককে সম্মানিত করেছে, যিনি নিজের স্কুলের ছাত্রদের রোল কলের সময়ে জয় হিন্দ এবং জয় ভারত বলার অভ্যাস করিয়েছেন।

সেই উদাহরণ টেনেই গুজরাটের শিক্ষা দফতর তাদের রাজ্যের সব স্কুলেই ছাত্রদের ‘জয় হিন্দ’, ‘জয় ভারত’ বলা বাধ্যতামূলক করেছে।

আহমেদাবাদের বাসিন্দা, ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রের বাবা সজীব রঞ্জন বলেন, ‘কিন্তু এভাবে কী ছাত্রদের মনে দেশভক্তির চেতনা আনা যায়? জবরদস্তি নিয়ম চালু করে ছাত্রদের মনে দেশের প্রতি, সৈনিকদের প্রতি ভক্তি জাগানো যায় না কখনই।’

তিনি বলেন, দেশের প্রতি ভক্তি আগেও ছিল, এখনও আছে। এই সরকার শুধু দেখনদারিতেই ব্যস্ত। ‘জয় হিন্দ’, ‘জয় ভারত’ বলার নিয়ম চালু না করে পঠনপাঠনের সুব্যবস্থা করা উচিত সরকারের। পড়াশোনার এত খরচ কেন বাড়ছে, স্কুলে বাচ্চারা কেন অনিয়মিত, সেই সব দিকে নজর না দিয়ে দেশভক্তির দেখনদারী করা হচ্ছে।

কিন্তু স্কুল শিক্ষক কমলেশ প্যাটেল বলছেন, অন্যদিন ইয়েস স্যার বলার সময়ে ছাত্ররা যেরকম নির্লিপ্ত থাকত, আজ তাদের মুখে চোখে একটা খুশির ভাব লক্ষ্য করেছি আমি। ছাত্রদের মুখে-চোখে সেই খুশির ভাব কতটা সত্যিই দেশভক্তির চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে, আর কতটা নিয়মের বেড়াজালে, সেটা নিয়ে রঞ্জনের মতো অনেকেই অবশ্য সন্দিহান। বিবিসি বাংলা।

এসআইএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।