বড় ভূমিকম্পের বড় ভয় নিয়ে দাঁড়িয়ে কলকাতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৩৫ এএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮
প্রতীকী ছবি

বড়সড় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠতে পারে কলকাতা! সেই ভূকম্পনের মাত্রা ন্যূনতম রিখটার স্কেলে ৬.১ থেকে সর্বাধিক ৬.৮ হতে পারে। ধসে পড়তে পারে পার্ক স্ট্রিট, সলটলেক, নিউ টাউন, রাজারহাট, দমদম, নাগেরবাজারের মতো জনবহুল এলাকাগুলো। ধূলিসাৎ হতে পারে সিঁথি, কালিদহ, নোয়াপাড়া, দক্ষিণদাড়ি, গোপালপুর, তেঘরিয়া, বেরাবেরি, দূর্গানগর ও মহিষবাথানসহ বিভিন্ন এলাকা। আগামী ৫০ বছরে এ আশঙ্কা আরও ১০ শতাংশ বাড়বে।

ভূমিকম্প কলকাতা শহর ও তার আশেপাশের এলাকাগুলোকে কতটা নাড়িয়ে দিতে পারে তা বুঝে রাজ্য প্রশাসন যাতে আপৎকালীন ব্যবস্থা নিতে পারে -সে জন্য একটি ‘সিসমোলজিক্যাল মাইক্রোজোনেশন ম্যাপ’ বানিয়েছে খড়্গপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি)। কেন্দ্রীয় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা সেই মানচিত্রে ভূমিকম্পের এ ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

আইআইটির অধ্যাপক শঙ্কর কুমার নাথের নেতৃত্বে গবেষক দলের এ গবেষণাপত্রটি ইউরোপিয়ান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘ন্যাচারাল হ্যাজার্ডস অ্যান্ড আর্থ সিস্টেম সায়েন্সেস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া আরও দু’টি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘জার্নাল অব আর্থকোয়েক ইঞ্জিনিয়ারিং’ ও ‘জার্নাল অব সিসমোলজি’-এ প্রকাশ করা হয়েছে।

মানচিত্রে বলা হয়, ভূগর্ভের জলস্তর অন্য জায়গাগুলোর তুলনায় অনেক উপরে থাকায় এবং তার খুব সামান্য নীচে পলিমাটি থাকায় তীব্র জলোচ্ছ্বাসে রাজারহাট, কৃষ্ণপুর, নিকো পার্ক, মহিষবাথান, নিউ টাউন, সলটলেক, নারকেলডাঙা, শিয়ালদহ স্টেশন, বেলেঘাটা, বাগবাজার, বিবাদি বাগ, পার্ক স্ট্রিট, পার্ক সার্কাস, বালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া ও কসবাসহ বিস্তীর্ণ এলাকার কার্যত ‘সলিলসমাধি’ ঘটতে পারে। যার জেরে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে ২৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ ধরলে পরিমাণ হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা।

শুধুই কলকাতা নয়, ইতোমধ্যে শিলং, গুয়াহাটিসহ ভারতের ৬টি শহরের ক্ষেত্রে এ ধরনের মানচিত্র বানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রণালয় দেশের ভূকম্পপ্রবণ মোট ৩০টি শহরের ক্ষেত্রে এ মানচিত্র তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দেশের আরও ৮টি শহরে এ মানচিত্র বানানো হবে। তাদের মধ্যে রয়েছে- পটনা, বারাণসী, লক্ষ্ণৌ, আগরা, মেরঠ, অমৃতসর, কানপুর ও ধানবাদ।

কেন কলকাতা এতটা ভূকম্পপ্রবণ?
আইআইটির জিওলজি অ্যান্ড জিওফিজিক্স বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর, ভাটনগর পুরস্কারজয়ী বিজ্ঞানী শঙ্কর কুমার নাথ জানান, তার কারণ মূলত ৫টি।

এক. কলকাতা অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ বেঙ্গল বেসিনের উপর রয়েছে। ওই বেঙ্গল বেসিনেই রয়েছে সাড়ে ৭ কিলোমিটার পুরু পলি মাটির স্তর। আর তার সাড়ে ৪ কিলোমিটার নীচে রয়েছে ইয়োসিন হিঞ্জ জোন। দীর্ঘ ২৫ কিলোমিটার চওড়া সেই হিঞ্জ জোন কলকাতা থেকে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ পর্যন্ত বিস্তৃত। যা বেঙ্গল বেসিনের পূর্ব দিকে যমুনা ফল্টে মিশেছে। ওই সংযোগস্থলে ভয়াবহ ভূকম্পে অতীতে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশের ঢাকা, বরিশাল, পাবনা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ-সহ একটি বিশাল এলাকা।

দুই. কলকাতার ৬শ’ থেকে ৭শ’ কিলোমিটার দূরে রয়েছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। যে এলাকায় অনেক ভয়াবহ ভূকম্পন হয়েছে, রয়েছে প্রচুর চ্যূতি। যেখানে ৮.১ থেকে সর্বাধিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে।

তিন. ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে ইস্টার্ন সাবডাকশান জোন। যেখানে ৮.৬/৮.৭ মাত্রার কম্পনের আশঙ্কা রয়েছে।

চার. কলকাতার ৬শ’ কিলোমিটার দূরে রয়েছে নেপাল সীমান্ত। পূর্ব মধ্য হিমালয়ের অঞ্চলে থাকা নেপাল-বিহার সীমান্তে অতীতে বড়সড় ভূমিকম্প হয়েছে। এখানে ৮.১ মাত্রার ভূমিকম্পের তীব্র আশঙ্কা রয়েছে। ভূটান, সিকিমে হতে পারে সর্বাধিক ৮.৩ মাত্রার ভূকম্পন।

পাঁচ. কলকাতার ৩শ’ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে বঙ্গোপসাগর। ১৯৬৪ সালে যেখানে ৫.৪ মাত্রা ভূকম্পন হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুই কলকাতায় ভূকম্পন নয়, শহরের উদ্বেগের অন্যতম প্রধান কারণ তার আশেপাশের লাগোয়া এলাকাগুলোও অত্যন্ত ভূকম্পপ্রবণ। অতীতে এসব এলাকাগুলোতে বারবার তীব্র থেকে তীব্রতর ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।

মানচিত্রগুলো বানানো হয়েছে ১৮৯৩ সাল থেকে ২০০২ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভূকম্পনের ইতিহাসের ভিত্তিতে। বলা হচ্ছে, ভূমিকম্পের এ আশঙ্কা থাকবে আগামী ৪৭৫ বছর পর্যন্ত। সূত্র : আনন্দবাজার

আরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।