উত্তর কোরিয়াকে ৫০ কোটি ডলার জরিমানা যুক্তরাষ্ট্রের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:০৬ এএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

মার্কিন এক ছাত্রকে কারাগারে রেখে নির্যাতন করে মেরে ফেলার অভিযোগে উত্তর কোরিয়াকে ৫০ কোটি ডলারেরও বেশি জরিমানা করেছে আমেরিকার এক ফেডারেল কোর্ট। নিহত ছাত্রের নাম ওটো ওয়ার্মবিয়ার। মঙ্গলবার বিচারক রায়ে বলেছেন, এই মৃত্যুর জন্য কিম জং উনের প্রশাসনই দায়ী। 

দেড় বছর আগে আমেরিকার সিনসিনাটি ইউনিভার্সিটির মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন ওটোর মৃত্যুর খবর পেয়েই মেজাজ হারিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। লিখিত বিবৃতিতে কিমের প্রশাসনকে ‘ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর’ তকমা দিয়েছিলেন। স্পষ্ট হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘এমন একটা দেশকে কীভাবে শায়েস্তা করতে হয়, তা আমাদের ভালোই জানা আছে।’

মঙ্গলবার আদালতে দাঁড়িয়ে একই কথা বলেন ওটোর মা সিন্ডি ওয়ার্মবিয়ার। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে আজও একটা অশুভ শক্তি, একটা শয়তান আছে। সেটা উত্তর কোরিয়া। ওরাই আমার ছেলেকে মেরেছে। এর বিচার চাই।’

তবে রায় শুনে কিছুটা শান্ত ছিলেন ওটোর বাবা ফ্রেড ওয়ার্মবিয়ার। বলেন, ‘লড়াইটা কঠিন ছিল। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। ছেলেকে কথা দিয়েছিলাম, এর শেষ দেখে ছাড়ব!’

কলম্বিয়া ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক জানান, পিয়ংইয়ং যখন ওটোকে আমেরিকার হাতে তুলে দেয়, তরুণ ছাত্র তখন সম্পূর্ণ অথর্ব, অন্ধ, শ্রবণশক্তিহীন। হাসপাতালে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এক বছর ধরে ওটো কোমাতেই। মস্তিষ্কের কোষগুলো সব শুকিয়ে গেছে! তারপর এক সপ্তাহও তাকে বাঁচিয়ে রাখা যায়নি।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বন্ধুদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে উত্তর কোরিয়ায় গিয়েছিলেন ২২ বছরের তরুণ ওটো। সেখানকার এক হোটেল থেকে সরকারি প্রচারমূলক পোস্টার চুরির দায়ে সে বছরই তাকে ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় পিয়ংইয়ং। কিমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রেরও অভিযোগ আনা হয় মার্কিন ছাত্রের বিরুদ্ধে। এর দেড় বছর পরে ওটোকে ‘মানবিক’ কারণে ছেড়ে দেয় কিমের দেশ। জানা যায়, জেলে যাওয়ার পরপরই কোমায় চলে যান ওটো।

গোড়া থেকেই ওটোর পরিবারের দাবি, জেলে অমানবিক নির্যাতনের কারণেই কোমায় চলে যান তাদের ছেলে। আর উত্তর কোরিয়া জানায়, খাদ্যে বিষক্রিয়া এবং ঘুমের ওষুধ খেয়েই ওটোর ওই হাল হয়েছিল। রোগের নাম বটুলিজম। মার্কিন চিকিৎসকেরা যদিও খাদ্যে বিষক্রিয়া কিংবা ওই রোগের কোনো প্রমাণ পাননি। উত্তর কোরিয়ার জেলে ওটোর ঠিক কী চিকিৎসা হয়েছিল, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে বিস্তর।

এ ঘটনার পর ওয়ার্মবিয়ার পরিবার উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ১০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছিল। এ মামলার রায়ে আদালত বলেন, সামগ্রিক জরিমানা হিসাবে ৪৫ কোটি ডলার দিতে হবে পিয়ংইয়ংকে। আর ওয়ার্মবিয়ার পরিবারকে আলাদাভাবে আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে আরও ৫১ কোটি ডলার।

আদালেতের এ রায়ে কিমের কাছে বেশ কড়া বার্তা গেল বলেই মনে করছেন মার্কিন কূটনীতিকদের একটা বড় অংশ।

গত জুনে সিঙ্গাপুরে কিম-ট্রাম্পের ‘ঐতিহাসিক’ বৈঠকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে রাজি হয়েছিল উত্তর কোরিয়া। কিন্তু এখনও পিয়ংইয়ংয়ের তরফ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ ট্রাম্প প্রশাসনের একাংশের।

এসআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।