দূষণে দিল্লিকেও ছাড়িয়ে গেল কলকাতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫২ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

কলকাতা শহরে দূষণের মাত্রা ক্রমশই বাড়ছে। শীতকাল আসলে ও ঠান্ডা পড়লে সেই দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব আরও বেশি অনুভূত হয়। খুব একটা পরিকল্পিত নগরী না হওয়া ও জনবসতির আশেপাশেই কলকারখানা গড়ে ওঠায় বাতাসে দূষণের মাত্রা আরও বেড়েছে।

বাতাসে দূষণের মাত্রা বোঝা যায় ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স’, বা ‘একিউআই’ সূচকের সাহায্যে। একিউআই যত বেশি হয় দূষণের মাত্রাও তত বেশি বলে ধরে সেয়া হয়। একিউআই শূন্য থেকে ৫০ মানে বাতাসের মান খুবই ভালো। ৫০ থেকে ১০০ হলে তুলনায় একটু কম ভালো। ১০১ থেকে ১৫০ মানে, যাদের শ্বাসকষ্ট বা ওই জাতীয় সমস্যা আছে -তাদের জন্যে খারাপ। ১৫১ থেকে ২০০ হলে অস্বাস্থ্যকর। ২০১ থেকে ৩০০ মানে অতি অস্বাস্থ্যকর এবং আর ৩০১ থেকে ৫০০-র মধ্যে একিউআই থাকলে ক্ষতিকর।

দিল্লিতে শীতকালে এ দূষণমাত্রা ৩০০-র কাছাকাছি থাকে। সেটাই যথেষ্ট খারাপ। নভেম্বরের শুরুতে দিল্লির অশোক বিহার রেল স্টেশন এলাকা, যা শহরের দূষিততম অঞ্চল বলে ধরা হয়, সেখানে একিউআই ছিল ২৯২ দশমিক ২৫। একই সময় কলকাতার উত্তর প্রান্তে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের একিউআই ছিল ৩৮১! এমনকি কলকাতা শহরের ফুসফুস বলে পরিচিত যে অঞ্চল, গাছপালায় ঘেরা সেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এলাকাতেও দূষণের মাত্রা ছিল ৩১০ দশমিক ৭৫! অর্থাৎ, গাছপালা, জলাশয় -এগুলোও কোনো সাহায্য করছে না শহরের দূষণ কমাতে।

ফুসফুসের রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. দোলনচাঁপা দাশগুপ্ত বলেন, ‘বাতাস পরিষ্কার হওয়ার পেছনে কতগুলো জিনিস থাকে, যেমন- কলকারখানার কাছাকাছি হবে না, প্রচুর পরিমাণে গাছ থাকবে, ধুলো-ধোঁয়া কম থাকবে। মেঠো ধুলো খুব তাড়াতাড়ি পড়ে যায়, কিন্তু গাড়ির ডিজেল বা পেট্রোলের ধোঁয়া বা কলকারখানার ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে থাকা ধুলোটা অত তাড়াতাড়ি পড়ে না। ফলে আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে না।’

তিনি আরও বলেন, কলকাতা যেহেতু খুব পরিকল্পিত নগরী নয়, জনবসতির আশেপাশেই কলকারখানা গড়ে উঠেছে, মূলত ক্ষুদ্র শিল্প। কিন্তু তার থেকেও বিভিন্নভাবে দূষণ ছড়াচ্ছে। আরও একটা সমস্যা, যানবাহন প্রচুর বেড়ে গেছে এবং সেক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

এগুলোর থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস বেরোচ্ছে, তা বাতাসকে দূষিত করে রাখছে। কলকারখানা থেকে যে ধোঁয়া বেরোচ্ছে তার মধ্যে শিসার মতো একাধিক দূষণ উপাদান থাকে। এগুলো সবই বাতাসে মিশে যাচ্ছে -বলেন তিনি।

এ ক্ষেত্রে কী করার আছে? ডা. দাশগুপ্ত বলেন, যেকোনো সমস্যার তিন ধরনের সমাধান আছে। প্রতিরোধক, স্থায়ী এবং অস্থায়ী। যেটা মানুষ চটজলদি করতে পারেন, সেই অস্থায়ী সমাধান হলো- ভোরবেলার দিকে খুব দরকারি কোনো কাজ না থাকলে শীতকালে বাইরে না বের হওয়াই ভালো। যতটা কম দূষণের আওতার বাইরে থাকা যায়। যদি বেরোতেই হয়, তা হলে নাক-মুখ ঢাকা মুখোশ পরে থাকা উচিত।

স্থায়ী সমাধান করতে হলে বড় আকারে করতে হবে। নিজেদের এলাকায় ছোট-বড় কী কলকারখানা আছে, সেটা দেখা, তারা কোনটা কতটা দূষণ ছড়ায়, সেটা মাপা। নতুন গাছ রোপন করা, পুরনো গাছ না কাটা। তবে সেরা সমাধান হলো- আগাম প্রতিরোধ। দূষণ হতে পারে এমন কিছু করতেই না দেওয়া, যাতে দূষণের সুযোগই না থাকে।

তবে পরিসংখ্যান বলছে, কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে ৯৯ শতাংশ মালবাহী গাড়ি এবং যাত্রীবাহী বাস ডিজেলে চলে। এ ছাড়া নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা, জলাশয় ধ্বংস করা ঘটেই চলছে। এ বিষয়ে প্রশাসনও সতর্ক নয়। দিল্লি শহরে যেখানে দূষণ মাপার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র রয়েছে ১৯টি, কলকাতায় সেখানে এমন যন্ত্রের সংখ্যা মাত্র ২টি। সূত্র : ডয়েচে ভেলে

আরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।