আরও ধর্মাশ্রিত হয়ে উঠছে ভারতের রাজনীতি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:১৩ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল। তবু আজকের ভারতের প্রতিষ্ঠাতারা এই দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। সেই ভাবনা থেকেই ভারতের সংবিধান রচিত হয়েছিল। জনসমষ্টির ৮০ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ার পরও ভারত তাই হিন্দুরাষ্ট্র নয়। কিন্তু এই দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ ক্রমশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বলে মত পর্যবেক্ষকদের একাংশের। ভারতীয় রাজনীতিতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির মোকাবিলায় এতদিন যেখানে বিরোধীরা ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের উপর জোর দিতো, সেখানে তারা ক্রমশ ধর্মকর্মের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে সেই প্রবণতাই দেখা গেল। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী অগুণতি মন্দির সফর করলেন।

সেখানে পুজা দিলেন। সঙ্গে ছিলেন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের শীর্ষ নেতারা। এই ছবি ফলাও করে প্রকাশিত হলো সংবাদপত্রে, দেখানো হলো টিভি চ্যানেলে। অথচ কিছুদিন আগেও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের এভাবে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের নজর টানতে মন্দিরে যেতে দেখা যায়নি। নির্বাচনে কংগ্রেসের সাফল্যে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ভোটে জেতার একটি হাতিয়ার হিসাবে বিরোধীরাও এবার ধর্মকে এভাবে ব্যবহার করবে?

কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক অরুণাভ ঘোষ তার দলের এই রণনীতির সঙ্গে সহমত নন। তিনি বলছেন, ‘এই রাজনীতিই আজ দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুবই খারাপ লক্ষণ এটা। অথচ এটা কংগ্রেসের পরম্পরা নয়। জওহরলাল নেহরু মন্দিরে যাননি ভোট পেতে। নরসিমা রাও থেকে হালের মনমোহন সিংয়ের ক্ষেত্রেও এ কথা বলা চলে।’

আরেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মন্দিরে গিয়েছেন, এ কথা স্বীকার করেও কংগ্রেস নেতা অরুণাভ বলেন, ‘ভারতীয় সংবিধানকে রক্ষা করতে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কথা মেনে চলতে হবে। তিনি বলেছিলেন, ধর্ম থাকবে মনে-কোণে-বনে। ধর্ম কখনো রাজনীতির বিষয় হতে পারে না। বিজেপির বিরুদ্ধে এ নিয়েই আমাদের লড়াই।’

জাতীয় রাজনীতির মতো একই প্রবণতা আগে থেকেই দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। এখানেও বিজেপির রামনবমীর মোকাবিলা করতে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস হনুমান জয়ন্তী পালন করছে। এটা যে বিজেপির রাজনীতির প্রভাবেই হচ্ছে, তা স্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতা, প্রাক্তন বিধায়ক নির্বেদ রায়। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার যখন সংবিধানবিরোধী কাজ করছে, তার মোকাবিলা করা জরুরি। মোকাবিলার পদ্ধতি কী হবে, সে ব্যাপারে নানা মত থাকতে পারে। হনুমান জয়ন্তী পালন, না অন্যভাবে সেটা করা হবে, ভাবতে হবে। তবে এটা ঠিক, কেন্দ্রের মোকাবিলায় আমাদের নিজস্ব কর্মসূচি ছেড়ে এই পথ নিতে হচ্ছে, এটা দুঃখের।’

যদিও তৃণমূল কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ থেকে সরে এসেছে বলে তিনি মনে করেন না। নির্বেদ বলেন, ‘গান্ধীজি তার সভায় হিন্দু ও ইসলামের ধর্মশাস্ত্র পাঠ করতেন। আমরা যদি হিন্দুদের উৎসব পালন করি, তাহলে যারা মুসলিম তোষণের অভিযোগ তোলেন, তারা কী বলবেন? আমরা সব সম্প্রদায়কে নিয়ে চলছি। এটা গান্ধীজির দেখানো পথ।’

মধ্যপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে দীর্ঘদিনের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে বিজেপির কট্টর হিন্দুত্বের মোকাবিলায় যে কংগ্রেসের ‘নরম হিন্দুত্ব’ কাজে এসেছে, এ কথাও মেনে নিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেছেন, ‘কংগ্রেস, তৃণমূলসহ বিরোধী দলগুলো ধর্মকে হাতিয়ার করছে, এই প্রবণতা দুর্ভাগ্যজনক। এটা আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তির পক্ষে ক্ষতিকর। আমাদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের কথা তুলে ধরা হলেও এটা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি, কোনো দল প্রচারের ধর্মের আশ্রয় নিতে পারবে না। সেই সুযোগে ধর্মের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে।’

আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীরা আরেও বেশি ঝুঁকতে পারে হিন্দুত্বের প্রচারের দিকে। তাহলে কি বিজেপির কৌশলে বদল আসবে- এমন প্রশ্নে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টই বলেছে, হিন্দুত্ব জীবনধারণের প্রণালী। বিজেপি এটা চিরকাল বিশ্বাস করে, নতুন নয়। এর সঙ্গে রাজনৈতিক কৌশলের সম্পর্ক নেই। বিরোধীরা যা করছে, সে সম্পর্কে একটি প্রবাদবাক্য বলা চলে— অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। যারা আজমল কাসাবকে সমর্থন করে, তাদের এই আচরণে মানুষ মত বদল করবে না। তবে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ে নিশ্চই কিছু ভুল-ভ্রান্তি আমাদের হয়েছে, তা আমরা শুধরে নেবো।’ সূত্র : ডয়েচে ভেলে।

এনএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।