‘আমার নাম হামিদ আনসারি...আমি চর নই’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৪৬ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

দীর্ঘ ছয় বছর পর অবশেষে ভারতীয় নাগরিক হামিদ আনসারিকে মুক্তি দিয়েছে পাকিস্তান। বীর-জারা ছবির সঙ্গে তার জীবনের আশ্চর্য মিল। বুধবার দিল্লিতে পৌঁছে শাহরুখ খানেরই অন্য একটি ছবির কায়দায় সেই হামিদ নেহাল আনসারি বললেন, ‘আই অ্যাম হামিদ আনসারি, অ্যান্ড আই অ্যাম নট অ্যা স্পাই।’

প্রেমের টানে ছ’বছর আগে দেশ ছেড়েছিলেন ২৭ বছরের হামিদ। বন্ধুর ভরসাতেই কাবুল হয়ে লুকিয়ে পাকিস্তানে ঢোকেন। আর সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায়। বুধবার সাক্ষাৎকারে সেই কাহিনী শোনালেন হামিদ।

২০১২ সালে মুম্বাইয়ের বাসিন্দা হামিদের সঙ্গে ফেসবুকে এক পাকিস্তানি মেয়ের বন্ধুত্ব হয়। তার সঙ্গে দেখা করতে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তান প্রবেশ করেন আনসারি। ভুয়া পরিচয়পত্র বানিয়ে হামিদকে কোহাটের এক হোটেলে এনেছিল পাক বন্ধু। পরেরদিন সে-ই পুলিশে খবর দেয়। প্রথম তিনদিন এক অজ্ঞাত জায়গায় হামিদকে বন্দী করে রাখে কোহাট পুলিশ। শেষে প্রেমিকা তাদের সম্পর্কের কথা স্বীকার করলে হামিদের হেফাজত নেয় গোয়েন্দা দফতর। অনুপ্রবেশের অভিযোগে ২০১৫ সালে হামিদকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় পাকিস্তানের এক সামরিক আদালত। কোহাট থেকে ঠাঁই হয় পেশোয়ারের সেন্ট্রাল জেলে।

মাটির তলায় একটি কুঠুরিতে রাখা হয়েছিল হামিদকে। বললেন, ‘দিন-রাতের তফাত বুঝতে পারতাম না। ২৪ ঘণ্টায় একবার শৌচাগারে যাওয়ার অনুমতি মিলত। তা-ও এক মিনিটের জন্য। প্রাণ রক্ষা করতে যতটুকু খাবার লাগে সেটুকুই পেতাম। কখনও তা-ও জুটত না। একবার গরমের সময় চল্লিশ দিন গোসল করতে দেয়নি। গায়ে পোকা হয়ে গিয়েছিল। জেরার সময় এমন মেরেছিল যে, বাম দিকের রেটিনায় ফুটো হয়ে গিয়েছে। মারের চোটে অজ্ঞান হয়ে যেতাম।’

হামিদের কথায়, ‘ভেবেছিলাম, আর কোনোদিনই বুঝি বাড়ি ফিরতে পারব না। মা-বাবার কথা মনে হতো খুব। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম আর আফসোস হতো।’ ততদিনে জেনেও গিয়েছেন, বাড়ির পছন্দ করা পাত্রের সঙ্গেই প্রেমিকার বিয়ে হয়েছে। তবে এত তাড়াতাড়ি মুক্তি পেতে চলেছেন মঙ্গলবারের আগে তা টেরও পাননি হামিদ। বললেন, ‘সকাল সাড়ে ছয়টা নাগাদ খবরটা পাই। প্রচণ্ড আনন্দ হচ্ছিল।’

৬ বছরের অন্ধকার দিনগুলো ভুলতে চান হামিদ। ভুলতে চান প্রেমিকাকেও। বললেন, ‘ও যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক। ঈশ্বর আমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছেন। নতুন করে শুরু করতে চাই।’

বুধবার দিল্লিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করেন হামিদ ও তার পরিবার। হামিদের মা ফৌজিয়া সুষমাকে বলেন, ‘আপনার জন্যই ছেলেকে ফিরে পেয়েছি।’ হামিদ সুষমাকে বলেন, ‘আই অ্যাম সরি।’ সুষমা বলেন, ‘সরি বলছ কেন? তুমি তো খুব সাহসী!’ আনন্দবাজার

এসআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।