বোনের স্মরণে ট্যাক্সিচালকের হাসপাতাল
বিনা চিকিৎসায় বোন মারুফার মৃত্যুর পর হাসপাতাল গড়ে তুলছেন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা ট্যাক্সিচালক মোহাম্মদ শহিদুল লস্কর। ২০০৪ সালে শহিদুলের বোন ১৮ বছরের মারুফা বিনা চিকিৎসাতেই মারা যান।
এরই মধ্যে ধীরে ধীরে ৫০ শয্যার হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন হয়েছে। অনেকের সহায়তায় গড়ে ওঠার পথে ‘মারুফা মেমোরিয়াল হাসপাতাল অ্যান্ড জেরিয়াট্রিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট’।
শহিদুলের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের প্রান্তিক পুঁড়ি গ্রামের মধ্যে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রও নেই। হাসপাতাল বলতে ১১ কিলোমিটার দূরের বারুইপুর মহকুমা হাসপাতাল। তাছাড়া গ্রামে নেই আপৎকালীন অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা।
শহিদুল বলেন, ‘বোনের মতো আর কাউকে যাতে এভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে না হয়, সে ব্যবস্থা করতে গ্রামে হাসপাতাল গড়ে তোলাটা দরকার। এটা মনে হয়েছিল। যেখানে বিনামূল্যে মিলবে স্বাস্থ্য পরিষেবা।’
২০০৮ সালে শহিদুল তৈরি করেন মারুফা স্মৃতি ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। তার সহযোগিতায় অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। শহিদুলের কর্মকাণ্ড শুনে এবং চাক্ষুষ দেখে এক ব্যক্তি নিজের প্রথম চাকরির প্রথম মাসের বেতন ২৫ হাজার টাকাই দিয়ে দিয়েছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক অনুষ্ঠানে প্রশংসা করেছেন শহিদুলের। তিনি বলেছেন, ‘শহিদুল কলকাতার কাছে পুঁড়ি গ্রামে একটি হাসপাতাল তৈরি করেছেন। এটাই নতুন ভারতের শক্তি।’
নিজের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে নিজের তিনটি ট্যাক্সি, কিছু জমি, স্ত্রীর গহনা বেচে এ কাজে নেমেছেন শহিদুল। এখন একটি ট্যাক্সি ভাড়ায় নিয়ে নিজেই চালান। কিন্তু কলকাতা শহরে শুধু ট্যাক্সি চালিয়ে হাসপাতাল তৈরি করবেন কীভাবে? শহিদুল বলেন, এ কাজে তিনি একা নন। যাত্রীরা তার সহায়।
তিনি বলেন, ‘ট্যাক্সির যাত্রীদের বলতাম আমার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে। প্রথমদিকে হয়তো তেমন সাড়া না পেলেও পরে আমি যখন একটু একটু করে এগোতে থাকি, হেলথ ক্যাম্পের আয়োজন করতে থাকি। যাত্রীদের সেসব ছবি দেখাতাম, তারা বিশ্বাস করে যে যেমন পারতেন, আমাকে সাহায্য করতেন।’
শহিদুলের পাশে প্রথম থেকেই দাঁড়িয়েছেন তার স্ত্রী শামিমা লস্কর। স্বচ্ছলতার চিন্তা না করে নিজের গহনা দিয়ে দিয়েছিলেন এই মহৎ কাজে। শহিদুল বলেন, ‘আমি স্ত্রীকে বলি, যতদিন আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে, ততদিন অন্তত দু’বেলা খাবারের অভাব হবে না। এই ভরসাতেই আমার স্ত্রী এগিয়ে এসেছিলেন।’
শামিমা বলেন, ‘আজ আমার অলংকারের শখ নেই। বরং আমাদের ক্ষুদ্র সামর্থের মধ্যে মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে ভালো লাগছে। আমার রোগীদের আমি নিজের হাতে সেবা করতে চাই। এখন অনেক মানুষ সাহায্য করেন। তাতে আরও অনুপ্রাণিত হচ্ছি।’
এখন মূলত আউটডোর ট্রিটমেন্ট পরিষেবাই চলে শহিদুলের হেলথ ক্যাম্পে। শহরের চিকিৎসকরা সেখানে উপস্থিত হন। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর চিকিৎসক শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক শহিদুলের ডাকে সাধ্যমতো সহায়তা করেন।
শহিদুল জানান, তার এখনো অনেক কাজই বাকি। তাই হাসপাতালের ১২ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন দিল্লিতে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার দেখা না হলেও দূরদর্শনের কেন্দ্রীয় অধিকর্তার হাতে তিনি তুলে দিয়েছেন ১২ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব। এখন প্রতীক্ষা রয়েছে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদানের।
সূত্র: ডয়েচেভেলে
বিএ/এমএস