সিরিয়ায় এক টুকরো ‘শান্তির রাজধানী’
সিরিয়ার একটি গ্রামে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ। তাই নিশ্চিন্তে জীবন কাটাতে পারেন নারীরা। জিনওয়ার গ্রামটা পেরুলেই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়ার চেহারা অদ্ভুতভাবে ধরা দেয়। আইএস জঙ্গিদের কালো পতাকা আর গ্রেনেডের হুঙ্কারে কার্যত জনপদ শূন্য সিরিয়া। এর মধ্যেই নিজেদেরকে নিজেরাই নিরাপত্তা দিয়ে একটি সুরক্ষিত গ্রাম তৈরি করেছেন নারীরা। উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার কুর্দিশ এলাকায় এই জিনওয়ার গ্রামে সব বাসিন্দাই নারী।
সেখানকার বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী জয়নব গাবারী বলেন, আমাদের জীবনে কোনও পুরুষের প্রয়োজন নেই। আমরা বেশ ভাল আছি। যেসব নারীরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চান, তাদের জন্য এটা আদর্শ জায়গা। জয়নবের মতো এখানকার সব নারীই এই ভাবনায় বিশ্বাস করে।
জিনওয়ার গ্রামের প্রত্যেক নারীর জীবনেই রয়েছে এক একটি মর্মান্তিক ঘটনা। কেউ আইএস জঙ্গিদের হাতে দীর্ঘদিন যৌনদাসী হয়ে বর্বরোচিত অত্যাচারের মুখোমুখি হয়েছেন। কারো স্বামীকে খুন করা হয়েছে। কেউ বা জঙ্গি হামলায় সন্তান-স্বামী দুইই খুইয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন। কেউবা দিনের পর দিন ধর্ষণ হয়ে সন্তানসম্ভবনা হয়ে পড়েছেন। জীবনের ঘটনা যাই হোক না কেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এক সরলরেখায় তারা যে অত্যাচারিত এবং অবহেলিত সেটা নির্দ্বিধায় বলছেন ওই গ্রামের নারীরা।
জিনওয়ার গ্রামে ঢুকতে গেলে সামনের ফটকে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন কয়েকজন নারী। আইএসের হামলা রুখতে অতন্দ্র প্রহরীর মতো কড়া পাহারা দিচ্ছেন তারা। কৃষিকাজ থেকে স্কুলে পড়ানো সব কাজে পারদর্শী তারা। স্থানীয় নারী এবং আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে এই গ্রাম। বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে আঁকা নারী শক্তির নানা কাহিনি।
শরণার্থী হয়ে না পালিয়ে আইএস জঙ্গিদের মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। স্বামী হারিয়ে ৩৮ বছর বয়সী আমিরা মুহাম্মদ বলেন, নারী ছাড়া স্বাধীনতা পাওয়া যায় না। যতদিন না নারীরা শিক্ষিত হচ্ছেন, স্বনির্ভর হচ্ছেন এই সমাজও কখনও স্বাধীন হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা নিজেরাই কৃষিকাজ করি। ফসল ফলাই। সেই ফসল রফতানিও করি। আবার সন্তান পালনও করি। পুরুষবিহীন এই ছোট্ট গ্রামই এখন ‘শান্তির রাজধানী’ তৈরি হয়েছে বাশার-অাল আসাদের যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ায়।
টিটিএন/পিআর