এইডস রোগীর আত্মহত্যা, ‘সংক্রমণের’ ভয়ে সেঁচা হলো হ্রদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:১০ এএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮

ভারতের কর্নাটক রাজ্যের ধারওয়ার জেলার ছোট্ট একটা গ্রাম মোরাব। এই গ্রামে রয়েছে ৩৬ একরের একটি বিশাল হ্রদ। একে মোরাব গ্রামের ‘লাইফলাইন’ও বলা হয়। কারণ গ্রামের প্রায় সব মানুষ এই হ্রদের পানির ওপর নির্ভরশীল। খাওয়ার জন্যও এই হ্রদের পানিই ব্যবহার করেন তারা।

সপ্তাহখানেক আগে এই হ্রদেই ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন গ্রামেরই এক নারী। গত ২৯ নভেম্বর নারীর মরদেহ হ্রদের পানিতে ভাসতে দেখেন কয়েকজন গ্রামবাসী। দাবানলের মতো খবরটা ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে। গ্রামবাসী জানত ওই নারী এইডসে আক্রান্ত। ফলে তার মরদেহ যখন হ্রদের পানিতে ভাসতে দেখে গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

নারীর মৃত্যুর জন্যই কি এই আতঙ্ক? না, মৃত্যুতে নয়, তার শরীরে বাসা বাঁধা জীবাণুই গ্রামবাসীদের মনে আতঙ্কের কারণ! তাদের ধারণা, ওই নারীর শরীরে থাকা এইডসের জীবাণু হ্রদের পানিতে মিশে গেছে। ফলে সেই পানি দূষিত হয়েছে। কোনোভাবেই ওই পানি আর পানের যোগ্য নয় বলেই মনে করছেন তারা।

তা হলে উপায়? উপায় অবশ্য বের করে ফেলেছেন গ্রামবাসীরা নিজেরাই। হ্রদের সব পানি বের করে দিতে হবে এখনই! তা নাহলে তারা এই পানি আর খাবেন না। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে দরবারও করেন গ্রামবাসীরা।

প্রশাসনের কাছে খবরটা পৌঁছতেই কর্মকর্তাদের মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ে। এত বড় একটা হ্রদের পানি বের করে ফেলবেন কীভাবে? প্রশাসনিক কর্মকর্তারা গ্রামবাসীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন এইচআইভি আক্রান্ত ওই নারী হ্রদে আত্মহত্যা করেছেন ঠিকই, কিন্তু তার শরীরের জীবাণু কোনোভাবেই পানিতে মেশেনি। আর এইচআইভির সংক্রমণ ওভাবে হয় না। শুধু তাই নয়, পানির পরীক্ষা করারও আশ্বাস দেয় প্রশাসন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! গ্রামবাসীরাও নাছোড়বান্দা।

এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘এইচআইভি আক্রান্ত ওই নারীর বদলে অন্য কোনো ব্যক্তি যদি ওই হ্রদে ডুবে মরতেন, তা হলে আমাদের এত আপত্তি থাকত না। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনোভাবেই ওই পানি খাওয়া সম্ভব নয়। গ্রামবাসীদের জীবন বাঁচাতে হ্রদের পানি পাল্টে ফেলাটাই শ্রেয়।’

আরেক গ্রামবাসী প্রশ্ন তুলেছেন- ‘নিজেদের পানির বোতলে কোনো নোংরা থাকলে সেই পানি কি খান কর্মকর্তারা? তাহলে আমাদের ওই হ্রদের পানি খেতে বলছেন কীভাবে?’

অগত্যা গ্রামবাসীদের জেদ আর গোঁ-এর কাছে নতস্বীকার করতে হয়েছে প্রশাসনকে।

গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য লক্ষ্মণ পাতিল জানিয়েছেন, গ্রামবাসীদের কিছুতেই বিষয়টা বোঝানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই পাম্প লাগিয়ে ওই পানি বের করে দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ দিন ধরে দিন-রাত এক করে ৫০ জান লোক দিয়ে পানি বের করার কাজ চালানো হচ্ছে। এখনও ৬০ শতাংশ পানি বের করা বাকি।’

এদিকে স্থানীয় প্রশাসন ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো বিষয়টি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে। না করলে গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে মালাপ্রভা খাল বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে তারা। কিন্তু এত বড় হ্রদের পানি বের করতে তো সময় লাগবে! সেই সময় কোথায়? তাই প্রশাসনের কাছে সময় বাড়ানোর আবেদনও জানিয়েছেন তিনি।

সূত্র : আনন্দবাজার

এমবিআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।