প্রকাশিত হলো ‘নারীদের বাইবেল’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:১৮ এএম, ০১ ডিসেম্বর ২০১৮

খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের অনুবাদ ও ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে না পেরে ধর্মতত্ত্বের একদল বিশেষজ্ঞ ‘নারীদের বাইবেল’ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, বাইবেলের বার্তা ব্যাখ্যার সময় নারীদের সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয় না।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিওলজির দুই শিক্ষক লরিয়ানা সেভোয়া ও এলিজাবেথ পারমোতিয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন দেশের ধর্মতত্ত্বের মোট ২০ জন নারী বিশেষজ্ঞ যৌথভাবে ফরাসি ভাষায় ‘উনে বিবলে দি ফাম’ অর্থাৎ ‘একটি নারীদের বাইবেল’ শীর্ষক বইটি লিখেছেন। অক্টোবরে সেটি প্রকাশিত হয়।

সেভোয়া বলেন, তিনি ও পারমোতিয়ের যখন খেয়াল করলেন যে, খুব কমসংখ্যক মানুষই বাইবেলের সঠিক ব্যাখ্যা জানেন, তখন এই ধরনের উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তুতি নেন তারা।

এ ছাড়া একদল মানুষ আছেন, যারা মনে করেন, আজকের যুগে নারী-পুরুষের মধ্যে যে সমতার বিষয়টি আলোচিত হয়, তা বাইবেলে পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে বাইবেলকে সেকেলে মনে করেন তারা। কিন্তু তাদের সঙ্গে একমত নন সেভোয়া। তিনি মনে করেন, সঠিক অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করা গেলে নারীমুক্তির একটি উপায় হয়ে উঠতে পারে বাইবেল।

বাইবেলের যেসব ব্যাখ্যায় নারীদের পুরুষদের চেয়ে দুর্বল ও তাদের অধীনস্থ দেখানো হয়েছে, সেসব ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে নারীদের বাইবেলে। যেমন- খ্রিস্টানদের একটি অন্যতম বই ‘গসপেল অফ লুক’-এ মার্থা ও মেরি নামে দুই নারীর সঙ্গে যিশুর দেখা করতে যাওয়ার ঘটনার উল্লেখ আছে। এই ঘটনার যে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, তাতে মার্থাকে খাবার সরবরাহকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। অথচ পারমোতিয়ের বলছেন, গ্রিক শব্দ ‘ডাইয়াকোনিয়া’র আরেকটি অর্থও আছে। এর অর্থ উপ-পুরোহিতও হতে পারে। অর্থাৎ, মার্থাকে উপ-পুরোহিত হিসেবেও চিত্রায়িত করা যেতে পারত বলে মনে করেন পারমোতিয়ের।

এ ছাড়া সেভোয়া বলেন, গসপেলগুলোতে (যিশুর জীবন-কাহিনি ও শিক্ষা সম্বলিত নতুন বাইবেলের প্রথম চারটি গ্রন্থ) যে নারী চরিত্রটি সবচেয়ে বেশিবার এসেছে, তিনি হচ্ছেন মেরি মাগডালেনে। এসব বইয়ে তাকে পতিতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু যিশু যখন ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছিলেন, তখন পুরুষ সঙ্গীরা ভয়ে সেখানে না গেলেও মাগডালেনে যিশুর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বলে জানান সেভোয়া।

সেভোয়া ও পারমোতিয়েরের মতো সমমনা নারীদের অভিযোগ, বাইবেলের বিভিন্ন বার্তার ব্যাখ্যায় নারীদের চাকরানি কিংবা পতিতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া কখনও নারীদের রাজার জন্য নাচতে দেখা গেছে, নয়তো নত হয়ে যিশুর পায়ে চুমু খেতে দেখা গেছে।

অবশ্য ‘নারীদের বাইবেলের’ বিষয়টি এবারই প্রথম নয়, এর আগে ১৮৯৮ সালে মার্কিন নারী এলিজাবেথ ক্যাডি স্ট্যান্টোনসহ ২৬ জন নারী ‘দ্য ওমেনস বাইবেল’ নামে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। ঐ সময় বাইবেলের ব্যাখ্যায় নারীদের সাধারণত পুরুষদের দাস হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হতো। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে ওই বই লিখেছিলেন তারা।

সেভোয়া ও পারমোতিয়ের জানিয়েছেন, তারা ওই বই থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন এবং প্রথমে ওই বইটিই ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু পরে তাদের মনে হয়েছে যে, বিষয়টিকে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী করে তোলার জন্য নতুন করে কিছু লেখা দরকার।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে

এমবিআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।