বিধ্বস্তের আগ মুহূর্তে যা ঘটেছিল ইন্দোনেশিয়ার সেই বিমানে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:২৮ এএম, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার ফ্লাইট জেটি৬১০ দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির অনুসন্ধানকারী দল। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে বোয়িং ৭৩৭ বিমানটির দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তের যাবতীয় পদক্ষেপ উল্লেখ করা হলেও দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ এতে উল্লেখ নেই বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। অনুসন্ধানকারী দল বলছে, পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেতে অন্তত আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

বুধবার ইন্দোনেশিয়ার ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট সেফটি কমিটির (কেএনকেটি) প্রধান নুরচায়ো উটোমো বলেছেন, ২৮ অক্টোবরে বালি থেকে জাকার্তা অভিমুখী ফ্লাইটে ত্রুটিদেখা দেয়। উড়োজাহাজটির অ্যান্টি-স্টল সিস্টেম বন্ধের পরও পাইলট এটি নিয়ে জাকার্তায় যান।

এক সংবাদ সম্মেলনে উটোমো বলেন, ‘আমাদের মতে, উড়োজাহাজটি ওড়ার উপযোগী ছিল না। তাই এটি নিয়ে ফ্লাইটে যাওয়া উচিত হয়নি।’

গত ২৯ অক্টোবর ১৮৯ জন যাত্রী নিয়ে লায়ন এয়ারের ওই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের ১৩ মিনিটের মধ্যে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে বিমানটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে দেখা যায় বিমানটি জাভা সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে বিমানে থাকা ১৮৯ আরোহীই মারা যান।

প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানটির আগের ফ্লাইটের গুরুতর যান্ত্রিক সমস্যা ছিল। বিমানটির এয়ারস্পিড ও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা নির্দেশক যন্ত্রে গোলযোগসহ ছয়টি সমস্যা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে অনুসন্ধানকারী দল। বিমানটির অ্যাঙ্গেল অ্যাটাক-সেনসর যেটি মূলত বিমানের পাখা ও বাযুপ্রবাহের কৌণিক দূরত্ব পরিমাপে ব্যবহৃত হয় তাতে ত্রুটি দেখা দেয়। অবশ্য দুর্ঘটনার আগের দিন এটি ঠিক করা হয়। তবে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সমস্যা চলমান ছিল।

তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, দুর্ঘটনার আগে বিমানটির সর্বশেষ ফ্লাইট ছিল বালি দ্বীপের ডেনপাসার থেকে জাকার্তার উদ্দেশে। আর এ সময়েই বিমানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে তাৎক্ষনিক জরুরি সিগনাল পাঠান পাইলট। বিমানের ক্রুরা এ বিষয়ে বলেন, ‘যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি অস্বাভাবিক অবস্থায় উড়ছিল।’

বিষয়টির সমাধান করা হয়েছে-কন্ট্রোল রুম থেকে এরকম বার্তা পাওয়ার পর অবশ্য বিমানটি পরে নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হয়।

তবে পুরো ফ্লাইট চলাকালীন বিমানটির স্টিক শেকার (এক ধরনের সতর্কীকরণ ডিভাইস যা মূলত বিমানে বিপদকালীন ক্রুদের সতর্ক করতে সঙ্কেত দেয়) সক্রিয় ছিল বলে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ফ্লাইট জেটি৬১০-এ আসলে কী ঘটেছিল

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানের পাইলট ও কো-পাইলট উভয়ই ছিলেন অভিজ্ঞ। পাইলটের ৬ হাজার ও কো-পাইলটের ৫ হাজার ১০০ ঘণ্টা ফ্লাইটের অভিজ্ঞতা ছিল। জেটি৬১০ ফ্লাইটটি ২৯ অক্টোবর স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২০ মিনিটে (গ্রিনিচ মান সময় রাত ১১টা ২০ মিনিট, ২৮ অক্টোবর) জাকার্তা বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। তবে উড্ডয়নের পরই বিমানটিতে সমস্যা দেয়া দেয়।

রাত ১১টা ২১ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময়): বিমানের কো-পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের কাছ থেকে রাডার ডিসপ্লে থেকে বিমানের উচ্চতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চান। এরপর পাইলট জানান ফ্লাইট কন্ট্রোলে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

রাত ১১টা ২২ মিনিটি : স্বয়ংক্রিয় অ্যান্টি-স্ট্যালিং পদ্ধতিতে ত্রুটির কারণে বিমানটির মুখ ১০ সেকেন্ডের জন্য নিম্নমুখী হয়। ক্রু নিজ থেকে এটি ঠিক করে দেন।

রাত ১১টা ২২ মিনিট : বিমানের কো-পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে বিমানের গ্রাউন্ড স্পিড জানতে চান।

রাত ১১টা ২৫ মিনিট : আবারও স্বয়ংক্রিয় অ্যান্টি-স্ট্যালিং পদ্ধতিতে ত্রুটির কারণে বিমানটির মুখ নিম্নমুখী হয়ে যায় এবং ক্রুটি আবারও নিজে ঠিক করে দেন। এভাবে পুরো ফ্লাইটজুড়ে এ অবস্থা চলতে থাকে।
রাত ১১টা ২৯ মিনিট : এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার লক্ষ্য করেন যে, বিমানটি আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসছে। এ সময় কো-পাইলট জানান, ফ্লাইট কন্ট্রোলে সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং বিমানটি ম্যানুয়ালি চলছে।

রাত ১১টা ৩০ মিনিট: ক্রুরা বিমানবন্দরে অ্যারাইভাল কন্ট্রোলারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং কন্ট্রোলার তাদের বানওয়েতে অবতরণ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন।

রাত ১১টা ৩১ মিনিট : ক্রুরা বলেন, তারা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বিমানটির উচ্চতা নির্ণয় করতে সক্ষম হচ্ছেন না। কারণ বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতা দেখা যাচ্ছে। তারা অ্যারাইভাল কন্ট্রোলারকে বিমানের ৩ হাজার ফুট ওপর ও নিচ জায়গাটি ব্লক করে দেয়ার নির্দেশ দেন, যাতে করে ওই জায়গাঢ অন্য বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়ানো যায়। কন্ট্রোলার তাদের অনুরোধে সম্মতি দেন।

রাত ১১ টা ৩১ মিনিট: এর কিছুক্ষণ পরই বিমানটির সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোর রুমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

অনুসন্ধানকারী দল ইতোমধ্যে বিমানটির ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন, তবে ককপিট ভয়েস রেকর্ডারটির অবস্থান এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

অনুসন্ধানকারী দল বলছে, এটি শনাক্ত করা গেলে পাইলট শেষ সময়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা জানা সম্ভব হবে।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স

এসআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।