প্রবীর সিকদারকে মুক্তি দিন
সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের গ্রেপ্তার ও রিমান্ড নিয়ে তার পরিবার এবং সাংবাদিক মহলে যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তা খুবই সঙ্গত। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের আক্রমণের শিকার হয়ে এই সাংবাদিক ইতোপূর্বে একটি পা হারিয়েছেন। ফেসবুকে তার দেওয়া একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে রোববার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া, হাতকড়া পরা অবস্থায় আদালতে তোলা, রিমান্ড মঞ্জুর এর সবই একটি অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
ফেসবুকের স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালী একজন মন্ত্রীর মানহানি হয়েছে এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭(২) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন ফরিদপুর জেলা জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি স্বপন পাল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার আদালতে তোলা হলে তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলি আদালতের বিচারক হামিদুল ইসলাম। রিমান্ডে নেওয়ার পরই বুধবার সকালে তাকে ফের আদালতে তোলা হলে জামিন দেন আদালত। জামিন পাওয়ার বিষয়টি অবশ্যই সাধুবাদ যোগ্য। শুধু জামিনই নয় প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হবে বলে আমরা আশা করছি।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তারা তার জীবনের জন্য শঙ্কার কারণ হতে পারেন বলে আশঙ্কা করেছিলেন প্রবীর সিকদার। তাতে একজন বিপন্ন মানুষের আকুতিই প্রকাশ পেয়েছিল। পুলিশের উচিত ছিল একজন বিপন্ন ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানো এবং তার অভিযোগগুলো ক্ষতিয়ে দেখা। সেটি না দেখে বরং ত্বরিৎ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ আনা হয় তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ আইনের ৫৭(২) ধারায়। আইসিটি আইনের এই ধারাটির অপব্যবহারের যে আশঙ্কা ছিল প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সেটি আবার প্রমাণিত হল।
বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার। এই সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার করছে। প্রবীর সিকদার তার লেখার মধ্যদিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে জনমত তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধে স্বজন হারানোদের একজনও তিনি। স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে লেখতে গিয়ে তাকে রোষানলে পড়ে একটি পা হারাতে হয়েছে। এরকম একজন সাংবাদিককে যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় হয়রানিমূলক মামলা এবং তার সূত্র ধরে নির্যাতনের শিকার হতে হয় এরচেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। আর আইসিটি আইনকে অনেকদিন ধরেই একটি কালাকানুন হিসেবে বলা হচ্ছে। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের আমলেই যদি এই আইনের এ ধরনের অপব্যবহার হয় তাহলে ভবিষ্যতে যদি কোনো ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় আসে তখন কী অবস্থা হবে। তাই মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হয় এবং অপব্যবহারের সুযোগ থাকে এ ধরনের আইন বাতিল করাই হবে যুক্তিযুক্ত।
তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেকদূর এগিয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান সরকারের কৃতিত্বও এখানে অনেক। এই সরকারের সময়েই আবার তথ্যপ্রযুক্তি আইন যদি গলার কাঁটা হয়ে দেখা দেয় তাহলে সেটা হবে স্ববিরোধিতা। প্রবীর সিকদারের ক্ষেত্রে এই আইনের প্রয়োগ অনেকগুলো বিষয় চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে সকল পক্ষকেই সতর্কতার সঙ্গে পথ চলতে হবে।
প্রবীর শিকদারের মুক্তির দাবিতে সাংবাদিক সমাজ নানা কর্মসূচি পালন করছে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকারের আমলে শহীদ পরিবারের একজন সাংবাদিককে নির্যাতনের শিকার হতে হবে এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা আশা করব তাকে মুক্তি দিয়ে এ সংক্রান্ত সকল জটিলতার একটি সুষ্ঠু সমাধান করা হবে।
এইচআর/পিআর