আমি তোমাদের ছেড়ে চলে গেলাম
‘মা আর বাবা, আমি চলে গেলাম তোমাদের ছেড়ে। বখাটের কারণে আমি মানুষ হতে পারলাম না।’ এক বখাটের উৎপাতের কারণে গত রোববার ভোরে গাইবান্ধা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মেধাবী স্কুলছাত্রী আমিনা আক্তার আত্মহত্যার আগে লিখে যাওয়া পাঁচ পৃষ্ঠার চিঠির শেষে এ কথাগুলো লিখেছে।
তবে তার আত্মহত্যার ঘটনার পেছনে প্ররোচণা দানকারী বখাটে রায়হান মিয়াকে (১৯) পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার বিকেলে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মো. জয়নাল আবেদীন দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে সোমবার রাতে আমিনার বাবা আব্দুর রউফ বাদি হয়ে গাইবান্ধা থানায় রায়হানকে আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। এদিকে অজ্ঞাত কারণে আমিনার বাবা সোমবার দায়ের করা এজাহারে আত্মহত্যার পেছনে কারণ সম্বলিত পাঁচ পৃষ্ঠার সুসাইড নোট ও মাতব্বরদের শালিস বৈঠকের বিষয়টি উল্লেখ করেননি।
তবে এ ব্যাপারে গাইবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ রাজিউর রহমান বলেন, পাঁচ পৃষ্ঠার সুসাইড নোটের বিষয়টি আমরা জানি। তদন্তে বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা হবে। এই ঘটনায় গাইবান্ধা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তার সহপাঠীরা দরিদ্র পরিবারের এই মেধাবী মেয়েটির মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেছে।
আমিনার পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের দুলালের ভিটা গ্রামের আমিনা গাইবান্ধা স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায় প্রতিদিনই শহরের কুঠিপাড়ার এলাকার তারা মিয়ার ছেলে রায়হান মিয়া তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করতো। স্থানীয় মাতাব্বররা জোরপূর্বক রায়হান মিয়ার সঙ্গে আমিনার বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আমিনার প্রতিবাদ ও কান্না তারা আমলে নেয়নি। বরং তার পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করে ১৬ আগস্ট রোববার সন্ধ্যার পর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে।
ওই ঘটনায় লজ্জা-অপমানে রোববার ভোরে আমিনা বাড়ির পাশে একটি গাছে রশিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে। সে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে পাঁচ পৃষ্ঠা একটি বর্ণনা (সুইসাইড নোট) লিখে যায়। চিঠির শেষে সে লিখেছে, ‘মা আর বাবা, আমি চলে গেলাম তোমাদের ছেড়ে। বখাটের কারণে আমি মানুষ হতে পারলাম না।’
স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাটি প্রকাশ হয়ে পড়লে বিভিন্ন মহলে তোলপাড় শুরু হয়। রোবরার রাতেই জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ ও পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম আমিনার বাড়িতে যান। তারা আমিনা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং আমিনার নিজ হাতে লেখা পাঁচ পৃষ্ঠার চিঠিটি উদ্ধার করেন।
আমিনার মা শিল্পী বেগম বলে, আমার মেয়ের হাতের লেখা চিঠিটি এখন পুলিশের কাছে রয়েছে।
অমিত দাশ/বিএ