নির্বাচন পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত : রয়টার্স

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:২৩ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০১৮

রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নেয়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আগামী নির্বাচন পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। তবে আগামী ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের পরে এ ব্যাপারে নতুন পদক্ষেপ নেয়া হবে। রোববার বাংলাদেশের শরণার্থী প্রত্যাবাসনবিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আবুল কালাম ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

শরণার্থীবিষয়ক ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেছেন, শরণার্থীদের প্রধান দাবি অনুযায়ী প্রত্যাবাসনের জন্য “নতুন ধরনের পদক্ষেপ” নেয়া প্রয়োজন।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে ৭ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে। রাখাইনে নিরাপত্তাবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর ওই অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বলছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং বেসামরিক বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের হত্যা, বাড়িঘরে আগুন ও গণধর্ষণ করছে। জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের উদ্দেশে এই অভিযান পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ করেছে।

তবে মিয়ানমার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী। গত অক্টোবরের শেষের দিকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। কিন্তু মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরানোর মতো নিরাপদ পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি দাবি করে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাসহ দাতা সংস্থাগুলো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছে।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দফায় গত ১৫ নভেম্বর থেকে ২ হাজার ২০০ রোহিঙ্গাকে রোহিঙ্গাকে রাখাইনে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়। প্রথম ধাপের তৈরি তালিকার রোহিঙ্গারা ন্যায়বিচার, নাগরিকত্ব, নিজ গ্রামে ফেরা ও জমির মালিকানা ফিরে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি না পাওয়া পর্যন্ত রাখাইনে ফিরবে না বলে দাবি জানায়।

রোহিঙ্গাদের যৌক্তিক এবং বাস্তবসম্মত দাবি মেনে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করতে গত সপ্তাহে মিয়ানমারের প্রতি চাপপ্রয়োগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন আবুল কালাম। তিনি বলেন, এসব ছাড়া কেউ রাখাইনে ফিরতে রাজি হবে বলে আমার মনে হয় না।

মিয়ানমারের অনেক মানুষ রোহিঙ্গাদের বাঙালি বলে ডাকে। এমনকি তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে সেদেশে পাড়ি জমানো অবৈধ অভিবাসী হিসেবেও মনে করে।

আবুল কালাম বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বা জনাকীর্ণ শরণার্থী শিবির থেকে নোয়াখালীর ভাসান চরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নতুন বছর না আসা পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। তিনি বলেন, নির্বাচন আসন্ন, তাই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্বাচনের পরে নেয়া হবে।

গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইনে দেশটির রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। রক্তাক্ত ওই অভিযানের মুখে প্রায় সাত লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

এসআইএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।