রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চিকে একহাত নিলেন মাহাথির
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে মিয়ানমারের নেতা অং সান সু চির কঠোর সমালোচনা করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গাদের ওপর যে বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে, তার ‘বৈধতা দেয়ার চেষ্টা’ করছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি।
সিঙ্গাপুরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো জোটের (আসিয়ান) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইনে দেশটির রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। রক্তাক্ত ওই অভিযানের মুখে প্রায় সাত লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা প্রতিবেশি বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ নৃশংস অভিযানের অভিযোগ করেছেন।
তবে দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে বলে দাবি করে আসছে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনা সব ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা নিপীড়নের জেরে বৈশ্বিক সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে সবসময় ‘নীরব’ ভূমিকা পালন করে আসছেন সু চি। এর ফলে মানবাধিকারের প্রতীক হিসেবে বিশ্ব পরিমণ্ডলে সু চির যে খ্যাতি ছিল তাও চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে।
সু চি প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ার ৯৩ বছর বয়সের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মাথাথির বলেন, ‘দেশের স্বার্থের জন্য “মঙ্গলজনক” আখ্যায়িত করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এসব লোকদের (রোহিঙ্গা) ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, হত্যা করছে- গণহারে হত্যা, মরদেহগুলো গণকবরে শায়িত করা হচ্ছে-এ রকম আর কত কী! তারা যা করছে তাকে শুধু প্রাচীন যুগের হত্যাযজ্ঞের সঙ্গেই তুলনা করা যেতে পারে, বর্তমান যুগে নয়। আমরা এটা প্রত্যাশা করি না।’
মালয়েশিয়ার এই প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘রাজনীতির কারণে কারাবরণ করেছেন এই নেত্রী। অতএব, এদিক দিয়ে হলেও তাকে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ বোঝা উচিত।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে নীরব ভূমিকার কারণে গত মাসে সু চিকে দেয়া সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিল করেছে কানাডা। চলতি বছরের মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ তাকে দেয়া পদক প্রত্যাহার করে নেয়।
মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চিকে দেয়া তাদের সর্বোচ্চ সম্মাননা প্রত্যাহার করে নিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি ১২ নভেম্বর এক ঘোষণায় জানিয়েছে, সু চি তার এক সময়কার নৈতিক অবস্থান থেকে ‘লজ্জাজনকভাবে’ সরে যাওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে সমালোচনার মুখে থাকলেও দেশে ও নিজের রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিতে (এনএলডি) সু চির জনপ্রিয়তা এখনও তুঙ্গে। কয়েক দশকের সেনা শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১৫ সালের শেষের দিকে এনএলডি দেশটির জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধস জয় পায়।
সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট
এসআর/আরআইপি