চলে গেলেন ‘এ যুগের শাহজাহান’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৩৩ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০১৮

ফাইজুল হাসান কাদরি। বয়স ৮৩ বছর। অবসরপ্রাপ্ত পোস্ট মাস্টার। স্ত্রীর মৃত্যুর পর ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে তৈরি করেছিলেন খুদে এক তাজমহল। নিজের বানানো সেই তাজমহলে স্ত্রীর পাশে সমাহিত হওয়ার শেষ ইচ্ছা ছিল তার।

অবশেষে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে বাদশাহ শাহজাহানের ভালোবাসার অপার নিদর্শন তাজমহলের আদলে বানানো মিনি তাজমহলে শায়িত হচ্ছেন ফাইজুল; শনিবার পূরণ হচ্ছে তার শেষ ইচ্ছা।

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলার কাসের কালানের ফাইজুল কাদরি স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার এই নিদর্শন তৈরি করে খেতাব পেয়েছিলেন ‘আধুনিক যুগের শাহজাহান’ হিসেবে।

ভারতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাসের কালান গ্রামে নিজ বাড়ির বাইরে অজ্ঞাত এক গাড়ির আঘাতে আহত হয়েছিলেন ফাইজুল। পরে আলীগড়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি।

tajmahal

কাদরির ভাইয়ের ছেলে মোহাম্মদ আসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ির বাইরে হাঁটছিলেন ফাইজুল কাদরি। এ সময় অজ্ঞাত একটি গাড়ি হঠাৎ চাপা দেয় তাকে। পরে খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে রাত ১টার দিকে স্থানীয় একটি হাসপাতাল নেয়া হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে তাকে আলীগরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে এ হাসপাতালে মারা যান তিনি।’

দুই বছর আগে বাইসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিলেন তিনি। তখন থেকে অধিকাংশ সময়ই পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতেন তিনি।

গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১১ সালে ডিসেম্বরে ফাইজুলের স্ত্রী তাজামুল্লি বেগম মারা গেছেন। ১৯৫৩ সালে বিয়ের বন্ধনে বাঁধা পড়েছিলেন তারা। এই দম্পতির কোনো সন্তান নেই। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাজমহলের আদলে ‘মিনি তাজমহল’র নির্মাণ কাজ শুরু করেন ফাইজুল।

হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, স্ত্রীকে মিনি তাজমহলের ভেতরেই দাফন করেছেন তিনি। মৃত্যুর পর স্ত্রীর কবরের পাশে শায়িত হওয়ার জন্য জায়গা রেখে দেন ফাইজুল।

tajmahal-kadri-1

২০১৫ সালে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব মিনি তাজমহলের নির্মাণ কাজ শেষ করতে ফাইজুল কাদরিকে ডেকে অর্থ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু বিনয়ের সঙ্গে মন্ত্রীর সেই সহায়তা নিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

ওই সময় মেয়েদের জন্য একটি কলেজ নির্মাণ করতে মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান ফাইজুল। একই সঙ্গে এই কলেজ নির্মাণের জন্য নিজের চার বিঘা জমি দান করেন তিনি। বর্তমানে কলেজের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেও পরিবারের সদস্যরা ফাইজুলের ময়না তদন্ত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ফলে তার ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফনে সম্মতি দিয়েছে পুলিশ। উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে নিজ হাতে গড়া মিনি তাজমহলে শনিবার সকালে শায়িত হবেন এ যুগের ‘শাহজাহান’ হিসেবে পরিচিত ফাইজুল হাসান কাদরি।

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস, সিয়াসাত।

এসআইএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।