বিশ্বজুড়ে কমছে শিশু, বাড়ছে বৃদ্ধ
আজকের শিশুরাই আগামীর উত্তরসূরী। তাইতো কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, ‘এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান; জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে চলে যেতে হবে আমাদের।’ কবি যদিও পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে যাওয়ার কথা বলে গেছেন কিন্তু নতুন করে শিশু না জন্মালে কার জন্য এ সাজানো বাসর, এ পৃথিবী। উদ্বেগের সংবাদ হলো সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, দুনিয়াজুড়ে কমে যাচ্ছে শিশুর সংখ্যা।
মেডিকেল বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রসিদ্ধ সাপ্তাহিক সাময়িকী দ্য ল্যানচেট জার্নালের সম্প্রতি প্রকাশিত এক নিবন্ধে গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীতে দিন দিন কমে যাচ্ছে শিশুর সংখ্যা। বিশ্বের অনেক দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতির ফলে শিশুর সংখ্যা আশ্চর্যজনকভাবে কমে যাচ্ছে। আর এর বিপরীতে প্রবীণদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফলে অনেক দেশেই জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষার মতো প্রয়োজনীয় শিশু নেই।
গবেষকরা এ ধরনের তথ্য উন্মোচনের পর বেশ আশ্চর্য হয়েছেন। তারা আশঙ্কা করছেন এর কারণে সমাজে নাতি-নাতনীর চেয়ে দাদা-দাদী কিংবা নানা-নানীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। যার সোজা অর্থ হলো নবীনদের চেয়ে বাড়বে প্রবীণের সংখ্যা। ১৯৫০ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যার ধারা পর্যালোচনার ভিত্তিতেই এ গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেছে দ্য ল্যানচেট জার্নাল।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে ১৯৫০ সালে নারীপ্রতি সন্তান জন্মদানের হার ছিল ৪ দশমিক ৭ জন। গত বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৪ জনে। তবে বিভিন্ন দেশে এই সংখ্যার তারতম্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। আফ্রিকার দেশ নাইজারে জন্মহার ৭ দশমিক ১ শতাংশ। অন্যদিকে ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাসে গড়ে একজন নারী সারা জীবনে একটির বেশি সন্তান জন্ম দেন না।
ইউনিভাসির্টি অব ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ্ ম্যাট্রিক্স এন্ড ইভালুয়েশনের পরিচালক অধ্যাপক ক্রিস্টোফার মুরারি বলছেন, ‘আমরা এমন একটা যুগ-সন্ধিক্ষণে এসে পৌঁছেছি যেখানে অর্ধেকের বেশি দেশে প্রত্যাশিত জন্মহার কমে যাচ্ছে। এটা সমাজের একটা উল্লেখযোগ্য রুপান্তর।’
বিশেষ করে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোতে জন্মাহার কমে গেছে। কিন্তু তার মানে এই না দেশগুলোতে জনসংখ্যার পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কেননা জন্মহার, মৃত্যুহার ও অভিবাসীর কারণে এসব দেশে জনসংখ্যা আগের মতোই থেকে যাচ্ছে।
তাছাড়া অনেক দেশেই যথেষ্ট পরিমাণ শিশুর জন্ম হচ্ছে বিপরীতে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। বর্তমানে জনসংখ্যার নিম্নহার সমস্যায় ভুগছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যেমন জার্মানি, লাটভিয়া। জাপানের নিম্ন জন্মহার তো এখন সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসএ/পিআর