বাবার লাশটাই এখন চাওয়া খাশোগির দুই ছেলের
বাবার মরদেহ ফেরত চেয়েছেন সাংবাদিক জামাল খাশোগির ছেলে সালাহ ও আবদুল্লাহ খাশোগি। রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বাবার কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তারা। গত ২ অক্টোবর তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার পর খাশোগিকে হত্যা করে সৌদি আরবের ১৫ সদস্যের একটি কিলিং স্কোয়াড। তবে এখনও তার লাশের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
এই প্রথমবারের মতো সংবামাধ্যমে সামনে হাজির হলেন খাশোগির দুই ছেলে। এসময় তারা তাদের বাবাকে নির্ভীক, উদার ও অত্যন্ত সাহসী বলে উল্লেখ করেন। যদিও এর আগে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দেখা করার পর বেশ সমালোচনার মুখোমুখি হন তারা। কেননা প্রাথমিক তদন্ত ও খাশোগি হত্যার সার্বিক প্রমাণাদি বলছে খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন যুবরাজ সালমান।
খাশোগির ছোট ছেলে ৩৩ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ বাবার নির্মম মৃত্যু সম্পর্কে বলেন, ‘আমি মনে মনে আশা করছি কষ্ট পেয়ে তার মৃত্যু হয়নি অথবা তাকে খুব দ্রুতই হত্যা করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি শান্তিপূর্ণভাবে তার মৃত্যু হয়েছে।’ খাশোগিকে একজন চমৎকার পিতা হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘বাবা অত্যন্ত নম্র স্বভাবের মানুষ ছিলেন। এজন্য সবাই তাকে ভালোবাসত।’
তার বড় ভাই ৩৫ বছর বয়সী সালাহ বলেন, ‘আমরা চাই অন্তত তার মরদেহ আমাদের কাছে ফেরত দেয়া হোক। মদীনার আল-বাকি কবরস্থানে আমাদের পূর্বপুরুষদের কবরের পাশে তাকে দাফন করতে চাই আমরা। আমরা সৌদি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি যেন আমাদের কাছে বাবার মরদেহ ফেরত দেয়। আশা করছি তারা খুব শিগগিরই আমাদের অনুরোধে সাড়া দেবে।’
সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন খাশোগি হত্যার নির্দেশ এসেছে সৌদি সরকারের উপরমহল থেকে। ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা এক কলামে এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা এটা ভালোভাবেই জেনে গেছি খাশোগি হত্যার নির্দেশ সৌদি রাজতন্ত্রের উপর মহল থেকে এসেছে।’
এদিকে এরদোয়ানের উপদেষ্টা ইয়াসিন আক্তার বলেছেন, খাশোগিকে হত্যার পর তার টুকরো টুকরো মরদেহ এসিড দিয়ে পোড়ানো হয়। হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে ও মরদেহ নিশ্চিহ্ন করতেই সৌদি কিলিং স্কোয়াড তার টুকরো টুকরো মরদেহ এসিড দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে বলে দাবি করেছেন তিনি।
রোববার তুরস্কের রাষ্ট্রীয় দৈনিক সাবাহ’র এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সাংবাদিক জামাল খাশোগির মরদেহের টুকরো করা অংশ পাঁচটি স্যুটকেসে করে সৌদি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খাশোগির মরদেহ লাপাত্তা করার কাজটি করেন ১৫ সদস্যের সৌদি কিলিং স্কোয়াডের অন্যতম তিন সদস্য মাহির মুতরিব, সালাহ তুবেগি ও তাহার আল হারবি। এরা সবাই যুবরাজ সালমানের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত।
উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে এ হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিল সৌদি আরব। তবে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিবেচনায় ও পশ্চিমা বিশ্বের চাপে বিশেষ করে একের পর এক তথ্য-প্রমাণাদি প্রকাশ হতে থাকায় শেষ পর্যন্ত সৌদি আরব স্বীকার করতে বাধ্য হয় খাশোগিকে তারাই হত্যা করেছে। তবে এখনও খাশোগির মরদেহের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
এসএ/জেআইএম