বিডি ওয়েল্ডিং শেয়ার কারসাজি : দুই আসামিকে ৩ বছরের কারাদণ্ড
বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডের (বিডি ওয়েল্ডিং) শেয়ার কারসাজি মামলার আসামি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম নুরুল ইসলাম ও ‘ডেইলি ইন্ডাস্ট্রি’ পত্রিকার সম্পাদক এনায়েত করিম প্রত্যেককে তিন বছরের কারদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা আর্থিক দণ্ড অনাদায়ে আরো ৬ মাস জেল দিয়েছেন বিএসইসি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার বিএসইসি স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি হুমায়ুন কবীর এই রায় প্রদান করেন। এটি বিএসইসি স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় রায়। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবীর এই রায় পড়ে শুনান।
রায়ে বিচারক বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সৌদি আরবের আল-আওয়াদ নামের একটি প্রতিষ্ঠান বিডি ওয়েল্ডিংয়ে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইমেইলে তথ্য আদান প্রদান করেন। এ তথ্যের কারণে সেসময় বিডি ওয়েল্ডিং কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে।
এ সুযোগে অভিযুক্তরা তাদের হাতে থাকা শেয়ার বাজারে বিক্রি করে অনৈতিকভাবে আর্থিক লাভবান হন। শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে বাজার থেকে অনৈতিকভাবে আসামি এনায়েত করিম ৫৩ লাখ ৮৯৩ টাকা হাতিয়ে নেয়। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ১৭ (এ) ১৭ (বি) এবং ১৭ (ই) ধারার বিধান লংঘন করেছেন।
রায় ঘোষণার পর আসামী পক্ষের আইনজীবী এটিএম মহিউদ্দিন কাজল তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করবো। রায়ের পর আসামীরদের হাস্যউজল চেহারায় দেখা গেছে।
অপরদিকে রাস্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. হাসিবুর রহমান দিদার বলেন, মামলার রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আসামীরা পরপস্পর যোগসাজশে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে ৬ টাকার শেয়ার ৪২ টাকায় বিক্রি করেছে। যার মাধ্যমে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। আর এটা আদালতে প্রমানিত হয়েছে।
এদিকে গত ৩ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধি নিয়ে গুজব ছড়ানো এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়া বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ ও সেবা প্রদানের দায়ে মাহবুব সারোয়ার নামে এক ব্যক্তিকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন এ আদালত। ঐটি ছিল বিএসইসি স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়।
এর আগে বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডের (বিডি ওয়েল্ডিং) শেয়ার কারসাজি মামলার (পুরাতন নং ২৫৫৪/০৭ এবং নতুন ৩/১৫) যুক্তিতর্ক শুনানি গত ৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ১৭ আগস্ট মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন বিচারক।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা থেকে শুরু করে বিকাল পৌনে ৫ টা পর্যন্ত বাদী-বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক ও শুনানি বিএসইসির স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) হুমায়ুন কবীর দীর্ঘ এ সময় মনোযোগ সহকারে বাদী-বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনেন।
এর আগে মামলায় তিনজন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীরা হলেন : তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক সহকারী পরিচালক তানিয়া শারমিন, পরিচালক আবুল কালাম, পরিচালক শেখ মাহবুব উর রহমান। মামলার বাদী বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমান।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বিডি ওয়েল্ডিংয়ের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। তখন ৬ টাকা মূল্যের শেয়ারের দাম ওঠে ৫০ টাকা। আর এ সময়ে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেন অভিযুক্তরা। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে করে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের পরিচালনা পর্ষদের নিকট শেয়ারের দাম বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে কি না জানতে চেয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ও বিএসইসি নোটিশ পাঠায়।
নোটিশের জবাবে কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রথমে জানানো হয়, দর বাড়ার কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য তাদের জানা নেই। কিন্তু এর কয়েক দিন পরই তারা জানায়, সৌদি আরবের আল-আওয়াদ গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেয়ারের মালিকানা বিক্রির ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। সৌদি গ্রুপটি এ দেশে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত ই-মেইলে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
বিএসইসির কাছে পুরো বিষয়টিই রহস্যজনক মনে হলে সংস্থার তৎকালীন পরিচালক এ টি এম তারিকুজ্জামান ও সহকারী পরিচালক তানিয়া শারমিনের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্তে উঠে আসে, ই-মেইলগুলো আসলে ভুয়া ও বানোয়াট ছিল। সৌদি আরবের সঙ্গে এসব ই-মেইলের কোনো সম্পর্ক নেই। তদন্ত প্রতিবেদনে অনেককে অভিযুক্ত করা হলেও পরে ২০০৭ সালের ২২ মে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এনায়েত করিম ও বিডি ওয়েল্ডিংয়ের এমডি এস এম নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ২০০৭ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে একই বছরের ২৯ মার্চ পর্যন্ত মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যমূলক ইমেইলে তথ্য আদান প্রদান করে শেয়ারের মূল্য কারসাজির মাধ্যমে বৃদ্ধি করেছে। যার মাধ্যমে আসামিরা বিপুল পরিমাণ আর্থিক লাভবান হয়েছে। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ১৭ (এ) ১৭ (বি) এবং ১৭ (ই) ধারার বিধান লংঘন করেছেন।
এসআই/এসকেডি/পিআর